Kawasaki Ninja H2R রিভিউ, দাম, ফিচার এবং স্পেসিফিকেশন

Kawasaki Ninja H2R হলো কাওয়াসাকি ব্র্যান্ডের একটি হাই-পারফর্মিং মোটরসাইকেল। এটি সুপারচার্জড ইঞ্জিন ফিচার বিশিষ্ট হাইপার স্পোর্টস বাইক, যা শুধুমাত্র ট্র্যাক রাইডিং-এর জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।  সুপারচার্জড ইঞ্জিন, ডুয়েল চ্যানেল এবিএস, এবং কাওসাকির নিজস্ব টেকনোলজির সমন্বয়ে এটি অসাধারণ একটি বাইক। বাইকটির ক্লাসি কার্বন ফাইবার ফেয়ারিং, উজ্জ্বল লাইটওয়েট হুইল, দুর্দান্ত অ্যাক্সিলারেশন এবং ইন্টেন্স স্পিড আপনাকে রোমাঞ্চকর রাইডিং এক্সপেরিয়েন্স দেবে। এই ব্লগে Kawasaki Ninja H2R রিভিউ, ফিচার, স্পেক্স, ভালো-মন্দ দিক সহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। রেসিং, কিংবা ট্র্যাক রাইডিং-এর জন্য বাইকটি অসাধারণ।

কাওয়াসাকি ব্র্যান্ডের বাইকগুলো পাওয়ারফুল ইঞ্জিন, অ্যাগ্রেসিভ ডিজাইন, এবং হাই-স্পিডের কারণে সারাবিশ্বে জনপ্রিয়। কাওয়াসাকি নিনজা এইচ২আর, বাইকটি এই ব্র্যান্ডের একটি প্রকৌশল দক্ষতার প্রতীক। বাইকটি কাওয়াসাকির সবচেয়ে উন্নত স্পোর্টস বাইকগুলোর মধ্যে একটি; যা প্রযুক্তি, কর্মক্ষমতা এবং কম্ফোর্টেবল রাইডিং-এর সমন্বয়ে একটি আল্টিমেট বিস্ট। বাইকটির ইঞ্জিন ম্যানেজমেন্ট ফিচার, টিএফটি ইন্সট্রুমেন্ট কনসোল, এবং মাস্কুলার অ্যারোডাইনামিক এরগোনোমিক্স আপনাকে মুগ্ধ করবে।

Kawasaki Ninja H2R রিভিউ

এই হাইপার স্পোর্টস বাইকটির সুপারচার্জড ইঞ্জিন, অতুলনীয় লেভেলের পাওয়ার জেনারেট করতে পারে, সাথে এটির অত্যাধুনিক ব্রেকিং এবং সাসপেনশন সিস্টেম অসাধারণ হ্যান্ডেলিং এবং স্ট্যাবিলিটি নিশ্চিত করে। এটিতে ১০০০ সিসির সুপারচার্জড ইনলাইন-ফোর-সিলিন্ডার ডুয়েল ওভারহেড ক্যামস্যাফট ফিচার বিশিষ্ট ব্যালান্সড ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে। বাইকটি থেকে আপনি প্রায় ১৫ কিমি/লিটার এভারেজ মাইলেজ এবং প্রায় ৪০০ কিমি/আওয়ার টপ স্পিড পেতে পারেন। ইঞ্জিনে কাওয়াসাকির লেটেস্ট ডাইনামিক মডেলিং সফটওয়ারের সাথে ইনারশিয়াল মেজারমেন্ট ইউনিট (IMU) এবং রেসিং ট্রান্সমিশন ফিচার সংযুক্ত করা হয়েছে।

বাইকটির স্পেশাল বৈশিষ্টগুলো হলো – কাওয়াসাকি কর্ণারিং ম্যানেজমেন্ট ফাঙ্কশন (KCMF), কাওয়াসাকি ট্রাক্শন কন্ট্রোল (KTRC), কাওয়াসাকি লঞ্চ কন্ট্রোল মোড (KLCM), কাওয়াসাকি ইন্টেলিজেন্ট এন্টিলক ব্রেক সিস্টেম (KIBS), কাওয়াসাকি ইঞ্জিন ব্রেক কন্ট্রোল (KEBC), কাওয়াসাকি কুইক শিফটার (KQS), ইলেকট্রনিক স্টিয়ারিং ড্যাম্পার ইত্যদি। এছাড়াও বাইকটিতে ইলেকট্রনিক থ্রটল ভালভ, ফুয়েল ইনজেকশন টেকনোলজি, স্মার্টফোন টেকনোলজি এবং ব্রেম্বো স্টিলেমা ক্যালিপার্স ব্যবহার করা হয়েছে। বাইকটির ফুল অ্যাডজাস্টেবল হাই-পারফরম্যান্স রেসিং সাসপেনশন সিস্টেম এবং ৬-স্পিড গিয়ার আপনার রাইডিং কম্ফোর্টেবল করবে। হুইল এবং টায়ারের মান প্রিমিয়াম কোয়ালিটির। বাইকটিতে কালারফুল TFT ডিসপ্লে রয়েছে। বাইকটিতে কাওয়াসাকির রাইডোলজি অ্যাপের মাধ্যমে মোবাইল কানেকশন দিতে পারবেন। ইন্সট্রুমেন্ট প্যানেলের এলইডি প্যানেলে ECO মোড রয়েছে, যা রাইডিং অবস্থা বজায় রেখে জ্বালানি খরচ অপ্টিমাইজ করতে পারে। এটি শুধু মাত্র ইলেকট্রিক মেথডে স্টার্ট করা যায়।

ফিচার এবং ডিজাইন

এটি একটি অ্যাগ্রেসিভ কিন্তু গ্ল্যামারাস স্টাইলের স্পোর্টস বাইক। বাইকটিতে একটি ট্রেলিস হাই-টেনসিল স্টিলের সুইংআর্ম মাউন্টিং প্লেট ফ্রেম ব্যবহার করা হয়েছে যা দুর্দান্ত স্ট্যাবিলিটি এবং অসাধারণ হ্যান্ডেলিং প্রদান করতে পারে। এটির কার্বন ফাইবার ফেয়ারিং শুধু নান্দনিকতাই বাড়ায় না বরং এর অ্যারোডাইনামিকস আরো উন্নত করে। বাইকটির গ্ল্যামারাস ডিজাইন, হাইলি ডিউরেবল পেইন্ট এবং মাস্কুলার ফুল-ফেয়ারিং বডিওয়ার্ক যে কারো নজর কাড়বে। বাইকটির বডি স্ট্রাকচার উইন্ড প্রটেকশনে সহায়ক। ওভারঅল বডি স্ট্রাকচার এবং গ্লসি বডি কিটসের কম্বিনেশন, বাইকটিকে একটি এলিগেন্ট লুক এনে দিয়েছে। এটির স্প্লিট-সিটিং পজিশনটি বেশ চওড়া এবং খুবই আরামদায়ক।

এটির গর্জিয়াস ডিজাইনের ফরোয়ার্ড কাউলিং, এলইডি হেডল্যাম্প, এবং TFT ডিসপ্লে প্যানেল যেকাউকে মুগ্ধ করবে। এটির স্পোর্টি ডিক্যালস, আপ-রাইজড সিটিং পজিশন, থ্রি-পার্টস হ্যান্ডেল বার এবং শার্প উইন্ডশীল্ড এটিকে দুর্দান্ত স্পোর্টি লুক এনে দিয়েছে। এটির এক্সজস্ট পাইপ, টেইল ল্যাম্প, এবং এর্গো-ফিট স্ট্রাকচার এটিকে একটি ক্লাসি ভাইব দিয়েছে। আপ-ডাউন কুইকশিফটার আপনার রাইডিং আরো কম্ফোর্টেবল করবে। এটিতে চারটি রাইডার মোড রয়েছে; স্পোর্ট, রোড, রেইন এবং একটি ম্যানুয়াল সেটআপ, যা রাইডিং স্টাইল এবং আবহাওয়া অনুযায়ী বিভিন্ন সাসপেনশন ম্যাপ প্রদান করে।

ইঞ্জিন পারফরম্যান্স

বাইকটিতে সুপারচার্জড ৯৯৮.০ সিসি ডিসপ্লেসমেন্ট ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে। এই ইঞ্জিন লিকুইড-কুল্ড, ৪-স্ট্রোক, ১৬-ভালভ, এবং ইনলাইন ৪-সিলিন্ডার ফিচার বিশিষ্ট। এছাড়াও ইঞ্জিনটি ফুয়েল ইনজেক্টেড এবং ডুয়েল ওভারহেড ক্যামস্যাফট ফিচার সম্বলিত। এই ইঞ্জিন ১৪০০০ আরপিএমে ৩০৫.৭০ বিএইচপি সর্বোচ্চ হর্সপাওয়ার এবং ১২৫০০ আরপিএমে ১৬৫.০ এনএম সর্বোচ্চ টর্ক জেনারেট করতে পারে। খুব বেশি পাওয়ার এবং টর্ক জেনেরেশনের ফলে আপনি ইন্টেন্স স্পিড এবং খুবই স্মুথ অ্যাক্সিলারেশন পাবেন। ইঞ্জিনের ইগনিশন সিস্টেম ডিজিটাল।

ইঞ্জিনের ট্রান্সমিশন সিস্টেম ম্যানুয়াল, এখানে ৬-স্পিড ডগ-রিং গিয়ারবক্স সহ ওয়েট মাল্টিপ্লেট ডিস্ক ক্লাচ সিস্টেম ব্যবহার করা হয়েছে। ইঞ্জিনের বোর এবং স্ট্রোক যথাক্রমে ৭৬ মিমি এবং ৫৫ মিমি। এটির কম্প্রেশন রেশিও ৮.৩:১। বাইকটি ইলেকট্রনিক কন্ট্রোল ইউনিট (ECU) এছাড়াও বিভিন্ন রাইডিং মোড দিয়ে সজ্জিত, যা রাইডারদের তাদের পছন্দ অনুযায়ী বাইকের পারফরম্যান্স কাস্টমাইজ করতে দেয়। এটিতে একটি কুইক-শিফটারও রয়েছে যা রাইডারদের ক্লাচ ব্যবহার না করেই গিয়ার পরিবর্তন করতে সাহায্য করে।

বডি ডাইমেনশন

বাইকটির বডি স্ট্রাকচার বেশ বড়। এটির ওভারঅল দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং উচ্চতা যথাক্রমে ২০৭০ মিমি, ৮৫০ মিমি এবং ১১৬০ মিমি। বাইকের সিটিং পজিশনের উচ্চতা ৮৩০ মিমি। বাইকটির হুইলবেস ১৪৫০ মিমি, যা কর্ণারিং এবং টপ-স্পিডে ভালো ভাবে বাইকের ব্যালেন্স নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। এটির গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স বেশ কম, মাত্র ১৩০ মিমি, তাই স্পিড ব্রেকার অতিক্রম করার সময় সতর্ক থাকতে হবে। এটি খুবই ভারী বাইক, ওজন ২১৬ কেজি, তাই তীব্র গতিতেও বাইক স্ট্যাবল থাকে। বাইকটির ফুয়েল ট্যাংক ক্যাপাসিটি ১৭ লিটার। এটির সিট কভার খুবই স্টাইলিশ, এখানে পিলিয়ন সিট এবং গ্র্যাবরেল নেই। এটিতে অ্যাডভান্স রাইডার এইড মোড রয়েছে যা ট্রাকশন কন্ট্রোলে সহায়তা করে।

ব্রেক এবং সাসপেনশন

বাইকটির সামনের দিকে ৪৩ মিমি-এর স্প্রিং-অ্যাডজাস্টেবল প্রিলোড, রিবাউন্ড সহ ইনভার্টেড ফর্ক কম্প্রেশন ড্যাম্পিং সাসপেনশন ব্যবহার করা হয়েছে। পিছনের দিকে ইউনি-ট্র্যাক, পিগ্গিব্যাক রিজার্ভার সহ ওলিন্স টিটিএক্স৩৬ গ্যাস-চার্জড শক এবং প্রিলোড অ্যাডজাস্টেবল কম্প্রেশন সহ রিবাউন্ড ড্যাম্পিং সাসপেনশন ব্যবহার করা হয়েছে। সামনের সাস্পেনশনটি টপ-আউট স্প্রিং এবং পিছনের সাস্পেনশনটি রিমোট স্প্রিং।

বাইকটিতে কাওয়াসাকি ইঞ্জিন ব্রেক কন্ট্রোল (KEBC) সিস্টেম ইনস্টল করা হয়েছে, যা বাইকটির ECU-এর সাথে কাজ করে, এটি রাস্তার অবস্থা এবং সিলেক্টেড রাইডার মোড অনুযায়ী রিয়েল-টাইমে কম্প্রেশন এবং ড্যাম্পিং সামঞ্জস্য করে।

বাইকটিতে কাওয়াসাকি ইন্টেলিজেন্ট ব্রেক সিস্টেম সহ ডুয়েল চ্যানেল এন্টিলক ব্রেকিং সিস্টেম ইনস্টল করা হয়েছে। সামনের চাকায় ৩৩০ মিমি-এর ডুয়েল সেমি-ফ্লোটিং ডিস্ক ব্রেক এবং পিছনের চাকায় ২৫০ মিমি-এর ডিস্ক ব্রেক (২-পিস্টন ক্যালিপার) বসানো হয়েছে। সামনের ডিস্ক ব্রেকটি ডুয়েল রেডিয়াল-মাউন্ট ৪-পিস্টন ব্রেম্বো স্টাইলমা ফ্রন্ট ক্যালিপার, যা অসাধারণ স্টপিং পাওয়ার প্রদান করে।

হুইল এবং টায়ার

বাইকটির হুইল অ্যালয় এবং টায়ার টিউবলেস ধরণের। সামনের চাকায় ১২০/৬০ জেডআর১৭ সেকশন টায়ার এবং পিছনের চাকায় ১৯০/৬৫ জেডআর১৭ সেকশন টায়ার ব্যবহার করা হয়েছে। উভয় হুইলের রিম সাইজ ১৭” ইঞ্চি। টায়ারগুলো ভি০১আর স্লিক হাইপারস্পোর্ট ধরণের, যা সব আবহাওয়ায় দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পাশাপাশি চমৎকার গ্রিপ প্রদান করে।

মাইলেজ এবং স্পিড

ফাস্ট-স্পিড এবং সুপারচার্জড পাওয়ারফুল ইঞ্জিন এই বাইকটির অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট। হাইপারস্পোর্টস টাইপ বাইক হওয়ায় এসব বাইকের স্পিড দুর্দান্ত হলেও, মাইলেজ খুব বেশি হয় না। বাইকটি থেকে আপনি প্রায় ১৫ কিমি/লিটার এভারেজ মাইলেজ এবং প্রায় ৪০০ কিমি/আওয়ার টপ-স্পিড পেতে পারেন। বাইকটিতে ফুয়েল ইনজেকশন টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়েছে তাই, পারফেক্ট গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল এবং উন্নত মানের ফুয়েল ব্যবহারের উপদেশ দেয়া হয়েছে।

কনসোল প্যানেল এবং ইলেকট্রিক্যাল ফিচার

বাইকটির ইন্সট্রুমেন্ট প্যানেলটি সম্পূর্ণ ডিজিটাল। কনসোল প্যানেলে স্পিডোমিটার, ওডোমিটার, আরপিএম মিটার সহ প্রয়োজনীয় বেশ কিছু ইনডিকেটর দেখতে পাবেন। সেটিংস অ্যাক্সেস করার জন্য রাইডার ইন্টারফেসের কনসোল প্যানেলে TFT ডিসপ্লে রয়েছে, যাতে ট্র্যাক রাইডিং-এর জন্য সার্কিট মোড, ট্যাকোমিটার, লো ফুয়েল ইনডিকেটর সহ আরো বেশ কিছু ফিচার দেখতে পাবেন। ডিসপ্লেতে থাকা ফাংশনগুলোর মধ্যে রয়েছে ইকোনমিক রাইডিং ইনডিকেটর, প্রিলোড মোড, কুইকশিফটার, ইঞ্জিন ব্রেক, কর্ণারিং লাইট, লীন অ্যাঙ্গেল ইন্ডিকেটর, টেম্পারেচার ওয়ার্নিং ইত্যাদি। এখানে আপনি রাইডিং লগ, মোবাইল ফোন নোটিফিকেশন এবং পছন্দ অনুযায়ী সেটিংস কাস্টমাইজ করতে পারবেন। এখানে কাওয়াসাকির  রাইডোলজি অ্যাপের মাধ্যমে ব্লুটুথ সংযোগ করতে পারবেন।

বাইকটির কার্যকারিতার কেন্দ্রবিন্দু হল Bosch’s IMU WITH KAWASAKI’S DYNAMIC MODELING SOFTWARE, ফরোয়ার্ড কোলিশন ওয়ার্নিং (FCW), এবং ব্লাইন্ড স্পট ডিটেকশন (BSD) সিস্টেম অফার করে। বাইকটিতে ১২ ভোল্টের শক্তিশালী এমএফ টাইপ ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে। এটির সকল লাইটিং সিস্টেম এলইডি টাইপ। এটিতে ইঞ্জিন কিল সুইচও রয়েছে। ওভারঅল Kawasaki Ninja H2R রিভিউ অনুযায়ী কনসোল প্যানেল এবং ইলেকট্রিক্যাল ফিচার খুবই উন্নত মানের।