আমরা যখন বাইক ক্রয় করি, তখন তা সাধারণত দীর্ঘসময় ব্যবহার করার উদ্দেশ্যে ক্রয় করা হয়। এসব ক্ষেত্রে বাইকের ডিজাইন, মাইলেজ, পারফরম্যান্স, সাপোর্ট সবকিছুই অনেক গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে। আবার বাইকের বাজেট যদি হয় কিছুটা বেশি, তখন রাইডাররা বাইক সিলেক্ট করতে গিয়ে আরো বেশি কনফিউজড হয়ে ওঠেন। এই কনফিউশান দূর করতেই আমরা ৫ লক্ষ টাকার মাঝে বাংলাদেশে সেরা ৫ টি মোটরসাইকেল আপনাদের সামনে তুলে ধরতে চাই। সবগুলো বাইক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করলে লেখা যেহেতু অনেক বড় হয়ে যাবে, তাই আমরা শুধু মূল পয়েন্টগুলো তুলে ধরবো। এতে করে পরবর্তীতে আপনারা বাইকটি নিয়ে আরো বিস্তারিত রিসার্চ করতে পারবেন।
১। Yamaha MT 15
আপনার বাজেট যদি ৫ লক্ষ টাকার আশেপাশে হয়ে থাকে তাহলে বর্তমানে বেশিরভাগ এক্সপার্ট আপনাকে Yamaha MT 15 সিলেক্ট করতে বলবে। বাইকটি বাংলাদেশে আসার পর থেকে নেকেড স্পোর্টস মোটরসাইকেল ক্যাটাগরিতে বেশ হাইপ তৈরি করেছে। বাইকে আছে অ্যাক্টিভ হ্যান্ডলিং, ওয়াইড হ্যান্ডেলবার পজিশন এবং এই বাইকের ওজন মাত্র ১৩৮ কেজি। বাইকের ডিজাইন নিয়ে বিশেষ কিছু বলার নাই, শুধু এইটুকুই বলা যায় যে এটি আর১৫ ভি৩ – এর নেকেড স্পোর্টস ভার্শন। তাই ডিজাইন যেকোনো রাইডারের নজড় কাড়তে বাধ্য।
বাইকে ব্যবহার করা হয়েছে ১৫৫ সিসির লিক্যুইড কুলড ৪ভি এসওএইচসি ইঞ্জিন। এই ইঞ্জিন আপনাকে ০ থেকে ৬০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায় পৌছে দিতে পারবে মাত্র ৩.৭৮ সেকেন্ডে। বাইকের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা হচ্ছে যথাক্রমে ২০২০ মিমি, ৮০০ মিমি এবং ১৩৩৫ মিমি। বাইকের সামনে টেলিস্কোপিক ফর্ক এবং পেছনে সুইং আর্ম সাসপেনশন ব্যবহার করা হয়েছে। সাথে থাকছে সিঙ্গেল চ্যানেল এবিএস সাপোর্ট।
২। KTM 125 Duke
একটি ভালো নেকেড স্পোর্টস বাইকের যেসব ফিচার থাকা দরকার, তার সবই রয়েছে KTM 125 Duke বাইকে। বাইকে ডিস্ক ব্রেক সেটআপ ব্যবহার করা হয়েছে এবং সাথে থাকছে এবিএস সাপোর্ট। বাইকের সামনে দেয়া হয়েছে আপসাইড-ডাউন টেলিস্কোপিক ফর্ক এবং পেছনে থাকছে মনো-শক সাসপেনশন। এই বাইকে ১২৫ সিসি সিঙ্গেল সিলিন্ডার লিক্যুইড কুলড ডিওএইচসি ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে যার ম্যাক্সিমাম পাওয়ার ১০,০০০ আরপিএমে ১৫ এইচপি এবং ম্যাক্সিমাম টর্ক ৭৫০০ আরপিএমে ১২ ন্যানোমিটার। এই বাইকের সবচেয়ে ভালো দিক হচ্ছে যে বেশ পাওয়ারফুল ইঞ্জিন ব্যবহার করা হলেও অপটিমাইজেশনের কারণে আপনি প্রায় ৪০ কিলোমিটার প্রতি লিটারের মাইলেজ পাবেন, যা মোটামুটি অবিশ্বাস্য।
৩। Suzuki GSX R150 Dual ABS
GSX R হচ্ছে সুজুকির একটি সুপার স্পোর্টস সেগমেন্টের সিরিজ। এই বাইকগুলোর ডিজাইন হয় বেশ নজরকাড়া এবং বাইকে পাওয়ারের কোনো ধরণের কমতি থাকে না। Suzuki GSX R150 Dual ABS এই সিরিজের নতুন মেম্বার। বাইকে ব্যবহার করা হয়েছে ১৪৭.৩ সিসির সিঙ্গেল সিলিন্ডার লিক্যুইড কুলড ডিওএইচসি ইঞ্জিন যা ১০,৫০০ আরপিএমে ১৮.৯ বিএইচপি ম্যাক্সিমাম পাওয়ার এবং ৯০০০ আরপিএমে ১৪ ন্যানোমিটার ম্যাক্সিমাম টর্ক জেনারেট করতে পারে। এই বাইক আপনাকে ৪৫ কিলোমিটার প্রতি লিটার প্রায় মাইলেজ দিতে পারবে। Suzuki GSX R150 Dual ABS বাইকের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা হচ্ছে যথাক্রমে ২০২০ মিমি, ৭০০ মিমি এবং ১০৭৫ মিমি এবং ওজন মাত্র ১৩১ কেজি। বাইকের সামনে টেলিস্কোপিক ফর্ক এবং পেছনে মনো-শক সাসপেনশন ব্যবহার করা হয়েছে। বাইকে ডুয়াল ডিস্ক ব্রেক সেটআপের পাশাপাশি ডুয়াল চ্যানেল এবিএস সাপোর্ট রয়েছে। তাই সবমিলিয়ে ৫ লক্ষ টাকার মাঝে এটি সেরা স্পোর্টস মোটরসাইকেলগুলোর মাঝে একটি।
৪। Yamaha R15 V3 Dark Knight
যাদের পারফরম্যান্স এবং ভালো ডিজাইন দুটোই প্রয়োজন তারা Yamaha R15 V3 Dark Knight কনসিডার করতে পারেন। এটায় ব্যবহার করা হয়েছে ১৫৫.১ সিসির সিঙ্গেল সিলিন্ডার লিক্যুইড কুলড ইঞ্জিন যা ১০,০০০ আরপিএমে ১৮.৬ এইচপি ম্যাক্সিমাম পাওয়ার ও ৮৫০০ আরপিএমে ১৪.১ ন্যানোমিটার টর্ক জেনারেট করতে পারে। বেশ পাওয়ারফুল ইঞ্জিন থাকা সত্ত্বেও আপনি Yamaha R15 V3 Dark Knight বাইক থেকে ৪০ কিলোমিটার প্রতি লিটার প্রায় মাইলেজ পাবেন। বাইকের সর্বোচ্চ গতি হচ্ছে ১৩৬ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা। বাইকে সিঙ্গেল ডিস্ক ব্রেক সেটআপ ব্যবহার করা হয়েছে এবং সাথে থাকছে ডুয়াল চ্যানেল এবিএস সাপোর্ট। বাইকে ব্যবহার করা হয়েছে অ্যালয় হুইল ও টিউবলেস টায়ার। বাইকের সামনে থাকছে টেলিস্কোপিক ফর্ক এবং পেছনে দেয়া হয়েছে মনো-শক অ্যাবজর্বার।
৫। Yamaha XSR 155
যাদের রেট্রো স্টাইলের বাইক পছন্দ তারা বাজেট কিছুটা বৃদ্ধি করে Yamaha XSR 155 নিয়ে নিতে পারেন। এই বাইকে থাকছে ১৫৫.১ সিসির লিক্যুইড কুলড ৪ভি এসওএইচসি ইঞ্জিন যা ১০,০০০ আরপিএমে ১৯.৩ পিএস ম্যাক্সিমাম পাওয়ার ও ৮৫০০ আরপিএমে ১৪.৭ ন্যানোমিটার টর্ক জেনারেট করতে পারে। বাইকের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা হচ্ছে যথাক্রমে ২০০০ মিমি, ৮০৫ মিমি ও ১০৮০ মিমি এবং বাইকের ওজন প্রায় ১৩৪ কেজি। বাইকের সামনে থাকছে টেলিস্কোপিক ফর্ক এবং পেছনে থাকছে মনো-শক অ্যাবজর্বার। বাইকে ডিস্ক ব্রেক সেটআপের পাশাপাশি থাকছে ডুয়াল চ্যানেল এবিএস সাপোর্ট। বাইকে অ্যালয় হুইল ও টিউবলেস টায়ার ব্যবহার করা হয়েছে।
পরিসংহার
স্পোর্টস, নেকেড স্পোর্ট ও রেট্রো স্টাইলের মোট ৫টি সেরা স্পোর্টস মোটরসাইকেল আপনাদের উদ্দেশ্যে আমরা তুলে ধরলাম। বলা বাহুল্য যে এই ক্ষেত্রে আমরা ব্র্যান্ড ভ্যালু ও বাইকের পারফরম্যান্সকে সমান পরিমাণে গুরুত্ব দিয়েছি। এখন আপনারা যেই বাইকটি ভালো লেগেছে সেটি নিয়ে আরো কিছুটা রিসার্চ করে আপনি ফাইনাল সিলেকশন করে ফেলতে পারেন।