এই শতাব্দীর শুরুর দিকেও বাংলাদেশের সড়কগুলোতে স্কুটারের চলাচল বেশ কম দেখা যেতো। তবে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে মানুষের বাইকের প্রতি ঝোক। একই সময়ে একটি নির্দিষ্ট সেগমেন্টের মানুষ স্কুটারের আরামদায়ক রাইড এবং কম ঝুকিঁর কথা বিবেচনা করে স্কুটার ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন। সেই থেকে বাংলাদেশের মার্কেটে স্কুটারের চাহিদা বেড়েই চলেছে। আগে স্কুটারকে বেশ দুর্বল মনে করা হলেও এখন কিন্তু কোনো ভাবেই তা সত্য নয়। কোম্পানীগুলো তাদের সবদিক থেকে পাওয়ারফুল ও স্টাইলিশ স্কুটারগুলো বাংলাদেশে নিয়ে আসছে এবং বাংলাদেশের মানুষ’ও তা সাচ্ছন্দ্যে গ্রহণ করছে। তাই আজকের লেখায় আমরা আপনাদের কাছে বাংলাদেশের ৫টি সেরা ১৫০ সিসি স্কুটার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করবো। আশা করি এই স্কুটার রিভিউ দেখে আপনারা আরো কার্যকর ক্রয়সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবেন।
৫টি সেরা ১৫০ সিসি স্কুটার সম্পর্কে আলোচনা
তবে চলুন বাংলাদেশের ৫টি সেরা ১৫০ সিসি স্কুটার সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।
১। Aprilia SR 150 Race Carbon ABS
Aprilia SR 150 হচ্ছে একটি স্পোর্টস স্কুটার। তাই এর ডিজাইনেও স্পোর্টি ভাইব দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। বাইকের উপরে রাইডার ও পিলিয়নের জন্য থাকছে বেশ লম্বা সিঙ্গেল সিট। স্কুটারের হেডলাইট ও টেইল লাইট হিসেবে হ্যালোজেন লাইট ব্যবহার করা হয়েছে। স্কুটারের ড্যাশবোর্ড বেশ মিনিমাল রাখার চেষ্টা করা হয়েছে তবে প্রয়োজনীয় সকল তথ্য সেখানে পেয়ে যাবেন।
Aprilia SR 150 – এর দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা ও ওজন হচ্ছে যথাক্রমে ১৯৮৫ মিমি, ৭০৩ মিমি, ১১৬৬ মিমি ও ১২২ কেজি। Aprilia SR 150 স্কুটারে ব্যবহার করা হয়েছে ১৫০ সিসির, ৩-ভাল্ভ, ৪-স্ট্রোক, সিঙ্গেল সিলিন্ডার ইঞ্জিন যা বেশ পাওয়ারফুল। তবুও এই স্কুটার আপনাকে ৪০ কিলোমিটার প্রতি লিটারের মাইলেজ দিতে পারবে। স্কুটারের সামনে ব্যবহার করা হয়েছে ডিস্ক ব্রেক এবং পেছনে থাকছে ড্রাম ব্রেকের সাপোর্ট। স্কুটারের সামনে থাকছে টেলিস্কোপিক ফর্ক এবং পেছনে দেয়া হয়েছে স্প্রিং-লোডেড ফর্ক। যারা সাধ্যের মাঝে স্পোর্টি লুকিং স্কুটার ক্রয় করতে চান তাদের টার্গেট করেই এই স্কুটার তৈরি করা হয়েছে।
২। Regal Raptor Forge
মানুষ স্কুটার ক্রয় করার সময় স্কুটারের গতি বা দাম বিবেচনা না করে স্কুটারের ব্র্যান্ড ভ্যালুকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। তাই মার্কেটে অনেক স্কুটারের ভীরে Regal Raptor Forge – এর মতো স্কুটারগুলো হারিয়ে যায়। যদিও মার্কেটে অন্যান্য স্কুটারের দামের তুলনায় তারা কম দামে বেশ ভালো কিছু অফার করছে।
Regal Raptor Forge স্কুটারের হেডলাইট, টেইল লাইট ও ইন্ডিকেটর, সবকিছুতেই থাকছে হ্যালোজেন লাইটের সাপোর্ট। স্কুটারের ড্যাশবোর্ডে পেয়ে যাবেন প্রয়োজনীয় সকল তথ্য এবং পাশে থাকবে একটি ৫ ওয়াটের ইউএসবি চার্জিং পোর্ট। Regal Raptor Forge স্কুটারের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা হচ্ছে যথাক্রমে ২০৩০ মিমি, ৭১৫ মিমি এবং ১১১৫ মিমি। স্কুটারে থাকছে ১৫০ সিসির ৪-স্ট্রোক সিঙ্গেল সিলিন্ডার ইঞ্জিন এবং ১০ লিটারের ফুয়েল ট্যাংক। এই স্কুটার আপনাকে ৩৫ থেকে ৪০ কিলোমিটার প্রতি লিটারের মাইলেজ দিতে পারবে।
স্কুটারের সামনে ও পেছনে থাকছে ডুয়াল ডিস্ক ব্রেকের সেটাপ। তবে কোনো ধরণের এবিএস বা সিবিএস নেই। এই স্কুটারেও সামনে টেলিস্কোপিক ফর্ক দেয়া হয়েছে এবং পেছনে দেয়া হয়েছে স্প্রিং-লোডেড শক অ্যাবজর্বার।
৩। Vespa Elegante 150
যাদের কাছে ব্র্যান্ড ভ্যালুর প্রায়োরিটি সবচেয়ে বেশি তাদের জন্য Vespa Elegante 150 হতে পারে আদর্শ চয়েস। এই স্কুটারের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা ও ওজন হচ্ছে যথাক্রমে ১৭৭০ মিমি, ৬৯০ মিমি, ১১৪০ মিমি ও ১১৪ কেজি। এই স্কুটারে ১৫০ সিসির বেশ পাওয়ারফুল ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে যা আপনাকে ৪৫ কিলোমিটার প্রতি লিটারের মাইলেজ দিতে পারবে। স্কুটারের সামনে দেয়া হয়েছে ডিস্ক ব্রেক ও পেছনে থাকছে ড্রাম ব্রেক। স্কুটারের সামনে থাকছে সিঙ্গেল সাইড আর্ম-ফ্রন্ট সাসপেনশন ও পেছনে দেয়া হয়েছে ডুয়াল-ইফেক্ট হাইড্রোলিক শক অ্যাবজর্বার।
৪। Meiduo BWS
কম বাজেটের মাঝে আরো একটি পাওয়ারফুল স্কুটার হচ্ছে Meiduo BWS। এই স্কুটারেও হেডলাইট ও টেইল লাইট হিসেবে হ্যালোজেন লাইট দেয়া হয়েছে। সিটের উচ্চতা বেশ কম হওয়ার কারণে ৫’ ৩’’ উচ্চতার উপরের যেকোনো রাইডার বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে রাইড করতে পারবেন। তবে স্কুটারে থাকছে মাত্র ৪.৮ লিটারের ফুয়েল ট্যাংক। স্কুটারে দেয়া হয়েছে ১৫০ সিসির ৪-স্ট্রোক সিঙ্গেল সিলিন্ডার ইঞ্জিন যা আপনাকে ৫০ কিলোমিটার প্রতি লিটারের মাইলেজ দিতে পারবে। এই স্কুটারেও থাকছে ডিস্ক-ড্রাম ব্রেক সেটাপ। সামনে থাকছে টেলিস্কোপিক ফর্ক এবং পেছনে ব্যবহার করা হয়েছে স্প্রিং-লোডেড ফর্ক।
৫। Vespa VXL 150
Vespa VXL 150 স্কুটারের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা ও ওজন হচ্ছে যথাক্রমে ১৭৭০ মিমি, ৬৯০ মিমি, ১১৪০ মিমি ও ১১৪ কেজি। এই স্কুটার আপনাকে গড়ে ৪৫ থেকে ৫০ কিলোমিটার প্রতি লিটারের মাইলেজ দিতে পারবে। ভেসপার অন্যান্য স্কুটারের মতো এই স্কুটারের ডিস্ক-ড্রাম ব্রেক সেটআপ দেয়া হয়েছে। সামনে দেয়া হচ্ছে সিঙ্গেল সাইড ফ্রন্ট-আর্ম সাসপেনশন এবং পেছনে দেয়া হয়েছে ডুয়াল-ইফেক্ট হাইড্রোলিক শক অ্যাবজর্বার। ভালো মাইলেজের পাশাপাশি এই স্কুটারের ৮ লিটার ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ফুয়েল ট্যাংক দেয়া হয়েছে।
পরিসংহার
আশা করি বাজারের সেরা স্কুটারগুলো সম্পর্কে আপনাদের ভালো একটি ধারণা দিতে পেরেছি। আপনার যদি ব্র্যান্ড ভ্যালু ও ফিচার উভয়ই প্রয়োজন হয় তাহলে আপনাকে অবশ্যই ২.৫ লক্ষ টাকার উপরে বাজেট রাখতে হবে। আর যদি ব্র্যান্ড ভ্যালু আপনার কাছে তেমন গুরুত্বপূর্ণ না হয়, তাহলে ২ লক্ষ টাকার নিচেই বেশ ভালো ভালো ফিচার সম্পন্ন স্কুটার আপনি পেয়ে যাবেন।