সেরা স্কুটার
গত কয়েক বছর আগেও স্কুটারের ব্যবহার এতো দেখা যেতো না, কিন্তু কিছু বছর ধরে তরুণ কিংবা বয়স্ক, যেকোনো বয়সের বাইকাররাই আরামদায়ক রাইডিং এক্সপেরিয়েন্সের জন্য স্কুটারকে বেছে নিচ্ছে। শুরুর দিকে, লোকেরা স্কুটারকে মোটরসাইকেল হিসাবে বিবেচনা করতো, যেগুলি কেবল মহিলারাই চালাতে পারে। কিন্তু এখন নারী-পুরুষ যেকেউ-ই নিত্যদিনের যাতায়াতের জন্য সহজ মাধ্যম হিসেবে স্কুটারকে পছন্দ করছে। সেরা স্কুটার-গুলো যেমন সেরা রাইডিং এক্সপেরিয়েন্স দেয়, তেমনি বাজেট ফ্রেন্ডলিও বটে।
২০২৪ সালে কেনার জন্য ৫ টি সেরা স্কুটার
সেরা স্কুটার অনেক আছে, তবে আমরা চেষ্টা করেছি ৫ টি সেরা স্কুটার সম্পর্কে আলোচনা করার। প্রত্যেক স্কুটারের-ই ইঞ্জিন পারফরম্যান্স, ব্রেক, সাসপেনশন সহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে। এতে আপনারা খুব সহজেই তুলনা করতে পারবেন কোন স্কুটারের কোন দিকটি আপনার জন্য বেশি পছন্দনীয়। আশা করি, BikesGuide-এর আজকের ব্লগ পড়ে জেনে নিতে পারবেন ২০২৪ সালে কেনার জন্য ৫ টি সেরা স্কুটার-গুলোর বিস্তারিত বর্ণনা।
হিরো ডুয়েট ১২৫
‘মাইলেজের জন্য বিখ্যাত’ ও ‘পারফরম্যান্সের দিক দিয়ে অসাধারণ’ কোনো ১২৫ সিসি বাইক খুঁজলে আপনার জন্য হিরো ডুয়েট ১২৫-এর চেয়ে ভালো কিছু হতে পারেনা। ৫ টি সেরা স্কুটার-এর মধ্যে এটি একটি।
হিরো ডুয়েট ১২৫-স্কুটারে ১২৫ সিসি, ৪-স্ট্রোক, সিঙ্গেল সিলিন্ডার, এয়ার-কুলড, টু-ভালভ, OHC একটা ইঞ্জিন আছে যা ৬৭৫০ আরপিএম-এ ৮.৭০ বিএইচপি সর্বোচ্চ শক্তি এবং ৫০০০ আরপিএম-এ ১০.২০ এনএম সর্বোচ্চ টর্ক উৎপন্ন করতে পারে। বাইকটিতে অটোম্যাটিক ক্লাচ ব্যবহার করা হয়েছে। এটির সামনের সাসপেনশন হিসেবে টেলিস্কোপিক হাইড্রোলিক শক এবসরবার এবং পেছনের সাসপেনশন ইউনিক সুইং উইথ স্প্রিং লোডেড হাইড্রোলিক ডেম্পার রয়েছে। সামনে ও পিছনে ড্রাম ব্রেক ব্যবহার করা হয়েছে। স্কুটারটির টপ স্পিড প্রায় ৯০ কিমি/ঘন্টা ও মাইলেজ প্রায় ৫০ কিমি/ঘন্টা।
স্কুটারটির ইলেক্ট্রিক ফিচারসের মধ্যে আছে হ্যালোজেন ইন্ডিকেটর, হেডলাইট (১২ ভোল্ট ৩৫/৩৫ হ্যালোজেন) এবং টেইল লাইট (হ্যালোজেন)। এছাড়াও আছে স্পিডোমিটার যা অ্যানালগ এবং ওডোমিটার ও আরপিএম মিটার যা ডিজিটাইজড। স্কুটারটির ব্যাটারি ভোল্টেজ ১২ ভোল্ট ৪ এএইচ।
হিরো মায়েস্ট্রো এডজ ১১০ বিএস৬
১১০ সিসি-র মধ্যে সেরা স্কুটার হিসেবে আপনার ‘হিরো মায়েস্ট্রো এডজ ১১০ বিএস৬’ স্কুটারটির নাম-ই আসবে। ১১০ সিসি বাইক আবার ইলেক্ট্রিক ফিচারস-এ ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার, আপনাকে মুগ্ধ করতে বাধ্য।
এই স্কুটারে ১১০.৯০ সিসি, ৪-স্ট্রোক, সিঙ্গেল সিলিন্ডার, এয়ার-কুলড, টু-ভালভ, SI একটা ইঞ্জিন আছে যা ৭২৫০ আরপিএম-এ ৭.৯০ বিএইচপি সর্বোচ্চ শক্তি এবং ৫৭৫০ আরপিএম-এ ৮.৭০ এনএম সর্বোচ্চ টর্ক উৎপন্ন করতে পারে। বাইকটিতে অটোম্যাটিক ক্লাচ ব্যবহার করা হয়েছে। এটির সামনের সাসপেনশন হিসেবে টেলিস্কোপিক হাইড্রোলিক শক এবসরবার এবং পেছনের সাসপেনশন ইউনিক সুইং উইথ স্প্রিং লোডেড হাইড্রোলিক ডেম্পার রয়েছে। সামনে ও পিছনে ড্রাম ব্রেক ব্যবহার করা হয়েছে। স্কুটারটির টপ স্পিড প্রায় ৭৫ কিমি/ঘন্টা ও মাইলেজ প্রায় ৩৫ কিমি/ঘন্টা।
স্কুটারটির ইলেক্ট্রিক ফিচারসের মধ্যে আছে হ্যালোজেন ইন্ডিকেটর, হেডলাইট (হ্যালোজেন) এবং টেইল লাইট (এলইডি)। এছাড়াও আছে স্পিডোমিটার ও ওডোমিটার যা অ্যানালগ এবং আরপিএম-মিটার যা ডিজিটাইজড। স্কুটারটির ব্যাটারি ভোল্টেজ ১২ ভোল্ট ৪ এএইচ ও হ্যান্ডেল টাইপ কনভেনশনাল।
হিরো প্ল্যাজার প্লাস
হিরো ব্র্যান্ডের বাইক বাংলাদেশে কতোটা পছন্দের তা আর বলার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না, ঠিক স্কুটারের বেলায়ও। হিরো প্ল্যাজার প্লাস বাইকের বিশেষত্ব হলো এর স্পোর্টি ডিজাইন। এই স্কুটারের ব্যবহার ভারতের প্রায় সব জায়গায়-ই, যা নিতান্তই চোখে পড়ার মতো।
এই স্কুটারে ১২৫ সিসি, ৪-স্ট্রোক, সিঙ্গেল সিলিন্ডার, এয়ার-কুলড, টু-ভালভ, OHC একটা ইঞ্জিন আছে যা ৭০০০ আরপিএম-এ ৮.০০ বিএইচপি সর্বোচ্চ শক্তি এবং ৫৫০০ আরপিএম-এ ৮.৭০ এনএম সর্বোচ্চ টর্ক উৎপন্ন করতে পারে। বাইকটিতে অটোম্যাটিক ক্লাচ ব্যবহার করা হয়েছে। এটির সামনের সাসপেনশন হিসেবে বোটম লিংক উইথ স্পিং লোডেড হাইড্রোলিক ডেম্পার এবং পেছনের সাসপেনশন ইউনিক সুইং উইথ স্প্রিং লোডেড হাইড্রোলিক ডেম্পার রয়েছে। সামনে ও পিছনে ড্রাম ব্রেক ব্যবহার করা হয়েছে। স্কুটারটির টপ স্পিড প্রায় ৭০ কিমি/ঘন্টা ও মাইলেজ প্রায় ৫০ কিমি/ঘন্টা।
স্কুটারটির ইলেক্ট্রিক ফিচারসের মধ্যে আছে হ্যালোজেন ইন্ডিকেটর, হেডলাইট (৩৫/৩৫ হ্যালোজেন) এবং টেইল লাইট (হ্যালোজেন)। এছাড়াও আছে স্পিডোমিটার যা অ্যানালগ এবং ওডোমিটার ও আরপিএম মিটার ডিজিটাইজড। স্কুটারটির ব্যাটারি ভোল্টেজ ১২ ভোল্ট ও হ্যান্ডেল টাইপ কনভেনশনাল।
জিপিএক্স ড্রোন ১৫০
কয়েক বছর ধরে GPX বাইকগুলো বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। GPX Demon 150 GR এবং GPX Demon GR165R এর মতো বাইকগুলি বাংলাদেশে খুব পরিচিত বাইক। স্কুটার হিসেবে জিপিএক্স ড্রোন ১৫০ সেরা স্কুটার-এর মধ্যে একটি।
স্কুটারে ১৫০ সিসি, ৪-স্ট্রোক, সিঙ্গেল সিলিন্ডার, লিকুইড-কুলড, টু-ভালভ, OHC একটা ইঞ্জিন আছে। বাইকটিতে ওয়েট-মাল্টিপ্লেট টাইপ ক্লাচ সিস্টেম ব্যবহার করা হয়েছে। এর স্টার্টিং মেথড হিসেবে ইলেক্ট্রলিক মেথড ব্যবহার করা হয়েছে। এটির সামনের সাসপেনশন হিসেবে টেলিস্কোপিক এবং পেছনের সাসপেনশন ডাবল স্প্রিং প্রিলোড ৩ লেভেল রয়েছে। সামনে সিঙ্গেল ডিস্ক ও পিছনে ডিস্ক ব্রেক ব্যবহার করা হয়েছে। স্কুটারটির টপ স্পিড প্রায় ১১০ কিমি/ঘন্টা ও মাইলেজ প্রায় ৪০ কিমি/ঘন্টা।
স্কুটারটির ইলেক্ট্রিক ফিচারসের মধ্যে আছে এলইডি ইন্ডিকেটর, হেডলাইট (এলইডি) এবং টেইল লাইট (এলইডি)। এছাড়াও আছে স্পিডোমিটার, ওডোমিটার ও আরপিএম মিটার পুরোপুরি ডিজিটাইজড। স্কুটারটির ব্যাটারি ভোল্টেজ ১২ ভোল্ট/ ৭ এএইচ ও হ্যান্ডেল টাইপ কনভেনশনাল। এই স্কুটারের একটা বড় প্লাস পয়েন্ট হচ্ছে এডিশনাল ফিচারস হিসেবে আছে ফুল ডিজিটাল এলসিডি মিটার, যা সচরাচর কোনো স্কুটারে দেখা যায় না।
ইমাহা ফ্যাসিনো ১২৫ এফআই
ইমাহা-র পারফরম্যান্স নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ খুব কম, তবে ইলেক্ট্রিক ফিচারস-এ এখনো পুরোনো প্রযুক্তির ব্যবহার, ইমাহা ফ্যাসিনো ১২৫ এফআই-স্কুটারটিকে একটু পিছিয়ে রেখেছে। তবে তরুণরা বাদে, প্রতিদিন অফিস কিংবা নিত্যদিনের প্রয়োজনে যাতায়াতের ক্ষেত্রে এই স্কুটারের ব্যবহার আপনাকে বেশ ভালো এক্সপেরিয়েন্স দিবে, কারণ এর এডিশনাল ফিচারসই এর অনেক বড় একটা প্লাস পয়েন্ট। আর তাই ৫ টি সেরা স্কুটার-এর লিস্টে ইমাহা ফ্যাসিনো ১২৫ এফআই-কে তো রাখাই যায়।
এই স্কুটারে ১২৫ সিসি, ৪-স্ট্রোক, সিঙ্গেল সিলিন্ডার, এয়ার-কুলড, টু-ভালভ, SOHC ইঞ্জিন আছে। বাইকটিতে অটোম্যাটিক ক্লাচ সিস্টেম ব্যবহার করা হয়েছে। এর স্টার্টিং মেথড হিসেবে ইলেক্ট্রলিক ও কিক উভয় মেথডই ব্যবহার করা হয়েছে। এটির সামনের সাসপেনশন হিসেবে টেলিস্কোপিক এবং পেছনের সাসপেনশন হিসেবে আছে ইউনিক সুইং। সামনে সিঙ্গেল ডিস্ক ও পিছনে ড্রাম ব্রেক ব্যবহার করা হয়েছে। স্কুটারটির টপ স্পিড প্রায় ৮৫ কিমি/ঘন্টা ও মাইলেজ প্রায় ৪০ কিমি/ঘন্টা।
স্কুটারটির ইলেক্ট্রিক ফিচারসের মধ্যে আছে হ্যালোজেন ইন্ডিকেটর, হ্যালোজেন হেডলাইট এবং হ্যালোজেন টেইল লাইট। এছাড়াও আছে স্পিডোমিটার, ওডোমিটার ও আরপিএম মিটার সবগুলোই অ্যানালগ প্রযুক্তির। স্কুটারটির ব্যাটারি ভোল্টেজ ১২ ভোল্ট/ ৫ এএইচ ও হ্যান্ডেল স্কুটার টাইপ। এই স্কুটারের এডিশনাল ফিচারস হিসেবে আছে স্টোপ এন্ড স্টার্ট সিস্টেম, স্মার্ট মোটর জেনারেটর (SMG) ফুল ডিজিটাল এলসিডি মিটার, যা নিতান্তই অনেক বড় একটা সুবিধা বলা চলে।
পরিশেষে
আমাদের উদ্দেশ্য ছিলো ৫ টি সেরা স্কুটার সম্পর্কে বেসিক ও কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য তুলে ধরার, যাতে ২০২৪ সালে আপনি যদি কোনো স্কুটার কেনার পরিকল্পনা করে থাকেন, তবে এই ব্লগ পড়ে আপনি বেশ উপকৃত হবেন বলে আশা করি। ৫ টি সেরা স্কুটার থেকে আপনি বেছে নিন কোনটি আপনার কাছে বেশি পছন্দনীয়। স্কুটার বাইকের দাম জানতে ভিজিট করুন – বিভিন্ন ধরণের স্কুটার বাইকের দাম ও মার্কেটে অন্যান্য বাইকের দাম জানতে ব্রাউজ করুন Bikroy এ।
এছাড়াও স্কুটার ও ই-বাইকের মধ্যে পার্থক্য জানতে চাইলে পড়ে নিতে পারেন – স্কুটার না ই-বাইক? কোনটি আপনার জন্য ভালো অপশন!