৩ লক্ষ টাকার মাঝে মোটরসাইকেল
ভালো বাইক পেতে হলেই যে বাজেট ৫ লক্ষ বা তার বেশি হতে হবে এমনটা নয়। আপনার বাজেট ৩ লক্ষ টাকা হলেও আপনি বেশ কয়েকটি ভালো মানের বাইক পেতে পারেন। তবে বাজারে এতো বাইক, এতো কোম্পানি, এতো ব্র্যান্ড! খুব ভালোমতো বাইকের ইনফরমেশনগুলো যাচাই না করলে আপনি হয়তো ভুল কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলতে পারেন। আর তাই জেনে নিন ৩ লক্ষ টাকার মাঝে মোটরসাইকেলগুলো কি কি ও এদের গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়।
সেরা ৫ টি মোটরসাইকেল
বাংলাদেশে মোটামুটি মিড-রেঞ্জের মোটরসাইকেলগুলো বেশ জনপ্রিয়। এগুলোর কর্ম-ক্ষমতা যেমন ভালো, তেমনি দামও হাতের নাগালেই। বেশ কিছু অসাধারণ ফিচারসের সমন্বয়ে আলোচিত আজকের এই Advice Article, যাতে আপনি খুব সহজেই নিজের জন্য বেস্ট একটা বাইক পছন্দ করে নিতে পারেন। চলুন জেনে নেই ৩ লক্ষ টাকার মাঝে বাংলাদেশের সেরা ৫ টি মোটরসাইকেল-গুলোর বিস্তারিত তথ্য।
হোন্ডা সিবি হর্নেট ১৬০আর
হোন্ডা সিবি হর্নেট ১৬০আর জনপ্রিয় ১৬০ সিসি রেঞ্জের মধ্যে একটি প্রিমিয়াম মোটরসাইকেল! মোটরসাইকেলটির ডিজাইনে রয়েছে নতুনত্ব এবং এর আকর্ষনীয় গ্রাফিক্স এটির স্পোর্টি লুককে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
বাইকটিতে একটি ১৬৩ সিসি এয়ার কুলড সিঙ্গেল সিলিন্ডার ইঞ্জিন রয়েছে যেটা ১৫.১ বিএইচপি শক্তি এবং ১৪.৭ নিউটন মিটার টর্ক উৎপন্ন করে। বাইকটির ইঞ্জিনে HET (হোন্ডা ইকো টেকনোলজি) ব্যবহার করা হয়েছে। এই টেকনোলজি ইঞ্জিনকে কম তেল পোড়াতে এবং সর্বোচ্চ পরিমান পার্ফরমেন্স দিতে সাহায্য করে। এটি মাত্র ১ লিটার তেলে শহরে ৪৫ কিলোমিটার এবং হাই ওয়েতে ৫৫ কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে পারে। বাইকটিতে একটি ৫ স্পীড গিয়ারবক্স রয়েছে। সামনের চাকায় দুই পিস্টন ক্যালিপারের Nissin এর ডিস্ক ব্রেক ব্যাবহার করা হয়েছে এবং পিছনের টায়ারে ড্রাম ব্রেক ব্যবহার করা হয়েছে।
বাংলাদেশে হোন্ডা সিবি হর্নেট ১৬০আর মোটরসাইকেলের দাম ১৬৯,৮০০ টাকা (অফিসিয়াল)। আসল মূল্য কম বেশি হতে পারে যা আপনি ডিলার এর কাছ থেকে যাচাই করে নিতে পারেন।
সুজুকি জিক্সার এফআই এবিএস
সুজুকি জিক্সার এফআই এবিএস ২০২১ বাইকটি তরুণদের কাছে বেশ সমাদৃত এবং গত কয়েক বছরে অনেকেই কিনেছেন বাইকটি।
সুজুকি জিক্সারের রয়েছে ১৫৪.৯ সিসি একটি এয়ার কুলড, ৪ স্ট্রোক এসআই ইঞ্জিন। ১৩.৬ পি এস ম্যাক্স হর্স পাওয়ারের সাথে রয়েছে ১৩.৮ ন্যানোমিটারের টর্ক যা মোটরসাইকেলটিকে করেছে বেশ শক্তিশালী। সুজুকি জিক্সারের ব্রেকিং সিস্টেম বেশ ভালো। এটি অনেক দ্রুত গতি নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম। ভালো ব্রেকিং এর জন্য ভালোমানের ফ্রন্ট শক অ্যাবজর্বার, ডিস্ক, টায়ার, টেলিস্কোপিক সাসপেনশন, মোটা রিয়ার টায়ার ইত্যাদি এটিকে সমৃদ্ধ করেছে। এই বাইকের সামনে দুটি টেলিস্কোপিক সাসপেনশন রয়েছে আর পিছনে রয়েছে এডজাস্টেবল মনোশক সাসপেনশন। যা হাইওয়ে রাইডিংয়ে আপনাকে দেবে দারুণ কম্ফোর্ট।
বাংলাদেশে সুজুকি জিক্সার এফআই এবিএস মোটরসাইকেলের দাম ২৪১,৯৫০ টাকা (অফিসিয়াল)। আসল মূল্য কম বেশি হতে পারে যা আপনি ডিলার এর কাছ থেকে যাচাই করে নিতে পারেন।
ইয়ামাহা এফজেডএস এফআই ডাবল ডিস্ক
ইয়ামাহা এফজেডএস এফআই ডাবল ডিস্ক ইয়ামাহা ব্র্যান্ডের একটি দুর্দান্ত মানের স্ট্যান্ডার্ড বাইক। এই বাইকটি, ইয়ামাহা এফজেডএসের একটি আপগ্রেড সংস্করণ। ক্লাসি ডিজাইন, আধুনিক ফিচার বিশিষ্ট ইঞ্জিন এবং ফুয়েল ইনজেকশন সিস্টেমের সমন্বয় করে বাইকটি বাজারে আনা হয়েছে।
বাইকটিতে ১৪৯.০ সিসি ডিসপ্লেসমেন্ট ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে। এই ইঞ্জিন এয়ার-কুলড, সিঙ্গেল-সিলিন্ডার, ২-ভালভ, এবং ৪-স্ট্রোক ফিচার বিশিষ্ট। এই ইঞ্জিন ৮০০০ আরপিএমে ১৩.০ বিএইচপি সর্বোচ্চ পাওয়ার এবং ৬০০০ আরপিএমে ১২.৮ এনএম সর্বোচ্চ টর্ক উৎপন্ন করতে পারে। বাইকটির ব্রেকিং সিস্টেম ডাবল ডিস্ক টাইপ। সামনের চাকায় ২৮২ মিমি-এর সিঙ্গেল ডিস্ক এবং পিছনের চাকায় ২২০ মিমি এর ডিস্ক ব্রেক ইনস্টল করা হয়েছে।বাইকটির সামনের দিকে টেলিস্কোপিক ফর্ক সাসপেনশন এবং পিছনের দিকে ৭-স্টেপ অ্যাডজাস্টেবল মনোক্রস সাসপেনশন ব্যবহার করা হয়েছে। এই সাসপেনশন সিস্টেম রাস্তার স্বাভাবিক স্পিড ব্রেকার এবং এবড়ো-থেবড়ো রাস্তার ধাক্কা ভালো ভাবে অ্যাবজর্ব করতে পারে।
বাংলাদেশে ইয়ামাহা এফজেডএস এফআই ডাবল ডিস্ক মোটরসাইকেলের দাম ২২৫,০০০ টাকা (অফিসিয়াল)। আসল মূল্য কম বেশি হতে পারে যা আপনি ডিলার এর কাছ থেকে যাচাই করে নিতে পারেন।
হিরো হাঙ্ক ডাবল ডিস্ক ম্যাট ব্ল্যাক
হিরো হাঙ্ক ডাবল ডিস্ক ম্যাট ব্ল্যাক, হিরো ব্র্যান্ডের একটি এলিগেন্ট ডিজাইনের স্পোর্টসি-কমিউটার টাইপ বাইক। গর্জিয়াস ডিজাইনের সাথে মজবুত বডি স্ট্রাকচার এবং শক্তিশালী ইঞ্জিনের লং-লাস্টিং পারফরম্যান্স যেকোনো বাইকারকে মুগ্ধ করবে, আর তাই বাংলাদেশের আলোচিত ৫ টি 150 সিসি মোটরসাইকেল-গুলোর মধ্যে এই বাইককে নিঃসন্দেহে রাখা-ই যায়।
বাইকটি ১৪.২ বিএইচপি @ ৮৫০০ আরপিএম সর্বোচ্চ পাওয়ার এবং ১২.৮ এনএম @ ৬৫০০ আরপিএম সর্বোচ্চ টর্ক প্রডিউস করতে সক্ষম। এই ইঞ্জিন এয়ার-কুলড, সিঙ্গেল-সিলিন্ডার এবং ৪-স্ট্রোক ধরণের। বাইকটির সামনের সাসপেনশনে টেলিস্কোপিক হাইড্রোলিক শক অ্যাবজর্বার এবং পিছনের সাসপেনশনে সুইং আর্ম নিট্রক্স জিআরএস (গ্যাস রিজার্ভার) সাসপেনশন ব্যবহার করা হয়েছে। সামনের এবং পিছনের উভয় চাকায় ডিস্ক টাইপ ব্রেক ব্যবহার করা হয়েছে।
বাংলাদেশে হিরো হাঙ্ক ডাবল ডিস্ক ম্যাট ব্ল্যাক মোটরসাইকেলের দাম ১৭৯,৯৯০ টাকা (অফিসিয়াল) । আসল মূল্য কম বেশি হতে পারে যা আপনি ডিলার এর কাছ থেকে যাচাই করে নিতে পারেন।
বাজাজ পালসার ১৫০ সিসি টুইন ডিস্ক
তরুণ হোক কিংবা বয়স্ক, যেকোনো মানুষের পছন্দের তালিকায় যেই বাইকটি স্থান করে নিয়েছে তা হলো বাজাজ পালসার।
মোটরসাইকেলটিতে থাকছে ৪-স্ট্রোক, ২-ভাল্ব, DTS-i ইঞ্জিন এর ১৪৯.৫০ সিসি এর একটি শক্তিশালী ইঞ্জিন যা মূলত ১৪ পিএস @ ৮০০০ আরপিএম এবং ১৩.৪ এনএম @ ৬০০০ আরপিএম টর্ক সমৃদ্ধ। এটির অফিসিয়াল সর্বোচ্চ স্পিড প্রতি ঘন্টায় ১১৫ কিমিঃ/ঘন্টা এবং প্রতি লিটার তেলে প্রায় ৪০ কিমিঃ বলে বলা হয়েছে। বাইকটির সামনে থাকছে ২৬০ মিমিঃ এর ডিস্ক (সিঙ্গেল চ্যানেল এবিএস) এবং পিছনে ২২০ মিমিঃ এর ডিস্ক ব্রেক। সামনের সাসপেনশন হিসেবে থাকছে টেলিস্কোপিক উইথ ডাবল অ্যান্টি ফ্রিকশন বুশ এবং পিছনে থাকছে টুইন সাসপেনশন উইথ নাইট্রোক্স শক এবজরবার।
বাংলাদেশে বাজাজ পালসার ১৫০ সিসি টুইন ডিস্ক মোটরসাইকেলের দাম ২১৫,৯০০ টাকা (অফিসিয়াল) । আসল মূল্য কম বেশি হতে পারে যা আপনি ডিলার এর কাছ থেকে যাচাই করে নিতে পারেন।
পরিশেষে
৩ লক্ষ টাকার মাঝে মোটরসাইকেল অনেক আছে, তবে আমরা চেষ্টা করেছি বেষ্ট ৫ টি মোটরসাইকেলের তথ্য তুলে ধরার। আশা করি আপনারা যারা ৩ লক্ষ টাকার মাঝে মোটরসাইকেল খুঁজছিলেন তারা আমাদের এই আর্টিকেল পড়ে পছন্দের বাইক খুঁজে পাবেন। বাইক সম্পর্কিত যেকোনো তথ্যে জন্য ভিজিট করুন BikesGuide-এ।