Royal Enfield Thunderbird 350X রিভিউ, দাম, ফিচার এবং স্পেসিফিকেশন

Royal Enfield Thunderbird 350X হলো একটি এলিগেন্ট ডিজাইনের ক্রুইজার টাইপ বাইক। দুর্দান্ত বিল্ড কোয়ালিটি, হাই-পারফর্মিং ইঞ্জিন এবং হাইওয়ে রোডে দীর্ঘ ভ্রমণের জন্য এটি খুবই জনপ্রিয়। টুইন-স্পার্ক কার্বুরেটর ইঞ্জিন এবং ডুয়েল চ্যানেল এন্টিলক ব্রেকিং সিস্টেমের সমন্বয়ে বাইকটি বাজারে আনা হয়েছে। খুবই কম্ফোর্টেবল রাইডিং এবং গর্জিয়াস ডিজাইন বাইকটির প্রধান আকর্ষণ। এটির ইঞ্জিন পারফরম্যান্স এবং সাসপেনশন সিস্টেমও টপ-নচ। এখানে আপনি Royal Enfield Thunderbird 350X রিভিউ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। বাইকটি লঞ্চ করার পর থেকে বহ বছর ধরে আধিপত্য ধরে রেখেছে। সিসি লিমিটেশনের কারণে বাইকটি বাংলাদেশে খুব কম দেখা যায়।

রয়্যাল এনফিল্ড হলো মোটরসাইকেলের জগতে একটি আইকনিক ব্র্যান্ড। থান্ডারবার্ড এই ব্র্যান্ডের একটি জনপ্রিয় ক্রুজার ক্যাটাগরির মোটরসাইকেল সিরিজ। এই থান্ডারবার্ড সিরিজটি ক্লাসিক ডিজাইন, কম্ফোর্টেবল রাইডিং এবং রিলাক্সিং ক্রুজিং এক্সপেরিয়েন্সের জন্য বিখ্যাত। এখানে রয়েল এনফিল্ড থান্ডারবার্ড ৩৫০এক্স বাইকটির ফিচার, স্পেসিফিকেশন, ভালো-মন্দ দিক সহ আরো বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বাইকটির লাক্সরিয়াস ক্লাসি ডিজাইন যেকারো নজর কাড়বে।

Royal Enfield Thunderbird 350X রিভিউ

রয়্যাল এনফিল্ড ব্র্যান্ডের বাইকের ইঞ্জিনের রিদমিক সাউন্ড একেবারেই ইউনিক। আপনি বাইকের থাম্পিং এক্সজস্ট সাউন্ডেই বুঝতে পারবেন এটি রয়্যাল এনফিল্ড বাইক। রয়েল এনফিল্ড থান্ডারবার্ড ৩৫০এক্স, বাইকটিতে ৩৫০ সিসির শক্তিশালী কার্বুরেটেড ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে। আকর্ষণীয় ক্লাসিক ডিজাইনের পাশাপাশি বাইকটি ডিউরেবিলিটি এবং রিলায়েবিলিটির জন্য খুবই জনপ্রিয়। বাইকটি থেকে আপনি প্রায় ৩০ কিমি/লিটার এভারেজ মাইলেজ এবং প্রায় ১১০ কিমি/আওয়ার টপ স্পিড পেতে পারেন। এটি মূলত রিলাক্স রাইডিং এবং দূর-দূরান্তে দীর্ঘ ভ্রমণের জন্য অনন্য।

বাইকটির স্পেশাল বৈশিষ্টগুলো হলো, এটির ক্লাসিক ডিজাইন, ৩৫০ কিউবিক ক্যাপাসিটির পাওয়ারফুল ইঞ্জিন, ডুয়েল চ্যানেল এবিএস ব্রেকিং সিস্টেম, প্রজেক্টর হেডল্যাম্প, ডিআরএল লাইটিং সিস্টেম, ইত্যাদি। বাইকটির অ্যাডজাস্টেবল সাসপেনশন সিস্টেম খুবই স্মুথ এবং কার্যকর। সকল লাইটিং এবং ইলেকট্রিক্যাল সিস্টেম দুর্দান্ত কার্যকর। হুইল এবং টায়ারের মান খুবই উন্নত। কনসোল প্যানেলে প্রয়োজনীয় সকল ফিচার দেখতে পাবেন। বাইকটি দীর্ঘ-ভ্রমণ এবং ট্যুরিংয়ের জন্য অসাধারণ। এটির পাওয়ারট্রেন, সাসপেনশন অ্যাসেম্বলি এবং ব্রেকিং সেটআপ সবই টপ-ক্লাস পারফরম্যান্স দেয়। এটি কিক এবং ইলেকট্রিক উভয় মেথডেই স্টার্ট করা যায়।

ফিচার এবং ডিজাইন

রয়েল এনফিল্ড থান্ডারবার্ড ৩৫০এক্স বাইকটির রিফ্রেশড কালার এবং ক্রুইজার-স্টাইলের এরগোনোমিক্স যে কাউকে আকর্ষণ করবে। বাইকটির ক্লাসি ভিনটেজ-স্টাইল এটির জনপ্রিয়তার অন্যতম প্রধান কারণ। এটির ইউনিক গোলাকার হেডল্যাম্প এবং ডুয়েল পড ইন্সট্রুমেন্ট ক্লাস্টারটি যেকারো নজর কাড়বে। বাইকটির ম্যাট ব্ল্যাক ৯-স্পোক অ্যালয় হুইল এবং ডিসেন্ট ডিজাইনের কেসিং আপনাকে মুগ্ধ করবে। এটির লম্বাটে এক্সজস্ট পাইপ, মাডগার্ড, ক্লাসি লুকিং টেইল ল্যাম্প এবং টিয়ারড্রপ ফুয়েল ট্যাংক ডিজাইন এটিকে একটি গর্জিয়াস লুক এনে দিয়েছে।

বাইকটির সিঙ্গেল ডাউনটিউব চেসিস, ডিজিটাল ডিসপ্লে, এবং ফুয়েল ট্যাংকে ব্র্যান্ড লোগো ডিজাইনটি অসাধারণ। এটির সিঙ্গেল সিট, শর্ট পাইপ হ্যান্ডেলবার, বার-এন্ড মিরর, এবং ফুট রেস্টের জন্য যথেষ্ট জায়গা আপনাকে কম্ফোর্টেবল রাইডিং এক্সপেরিয়েন্স দেবে। এটিতে পিলিয়ন সিট থাকলেও গ্র্যাব রেল নেই।

ইঞ্জিন পারফরম্যান্স

বাইকটিতে ৩৪৬.০ সিসি ডিসপ্লেসমেন্ট ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে। এই ইঞ্জিন ৪-স্ট্রোক, এয়ার-কুল্ড, সিঙ্গেল-সিলিন্ডার, এবং টুইন-স্পার্ক ফিচার বিশিষ্ট। ইঞ্জিনটি পাওয়ারফুল মিড-রেঞ্জ এবং লিনিয়ার পাওয়ার ডেলিভারি মেইনটেইন করতে পারে, তাই এটি দীর্ঘ ভ্রমণের জন্য দুর্দান্ত। এটি ৫২৫০ আরপিএমে ১৯.৫৩ বিএইচপি সর্বোচ্চ পাওয়ার এবং ৪০০০ আরপিএমে ২৮.০ এনএম সর্বোচ্চ টর্ক উৎপন্ন করতে পারে। টর্ক জেনারেশন দুর্দান্ত হওয়ায় আপনি বাইকটি থেকে স্মুথ অ্যাক্সিলারেশন পাবেন। বাইকটির ট্রান্সমিশন সিস্টেম ম্যানুয়াল, এখানে ওয়েট মাল্টিপ্লেট ক্লাচ সহ ৫-স্পিড গিয়ারবক্স ইনস্টল করা হয়েছে। এটির ফুয়েল সাপ্লাই সিস্টেম ২৯ মিমি-এর কনস্ট্যান্ট ভ্যাক্যুম কার্বুরেটর।

বডি ডাইমেনশন

ক্রুইজার টাইপ বাইকের বডি স্ট্রাকচার অন্যান্য বাইকের থেকে কিছুটা আলাদা হয়ে থাকে। এই রয়েল এনফিল্ড থান্ডারবার্ড ৩৫০এক্স বাইকটি বেশ ভারী, এটিতে সিঙ্গেল ডাউনটিউব চেসিস ব্যবহার করা হয়েছে। এটির ওভারঅল দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং উচ্চতা যথাক্রমে ২০৪০ মিমি, ৮৩০ মিমি, এবং ১১৪০ মিমি। এটির হুইলবেস দেখতে বেশ বড়, ১৩৫০ মিমি, যা কর্ণারিং-এ সহায়ক। এটির গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স বেশ কম, মাত্র ১৩৫ মিমি, তাই বেশি উঁচু স্পিড ব্রেকার অতিক্রম করার সময় সতর্ক থাকতে হবে।

বাইকটির ফুয়েল ট্যাংক বেশ বড়, ফুয়েল ক্যাপাসিটি ২০ লিটার। এটির বেশ ভারী একটি বাইক, ওজন ১৯৭ কেজি। এটির সিটিং পজিশন সিঙ্গেল-সিট টাইপ এবং খুবই কম্ফোর্টেবল। বাইকটিতে পিলিয়ন সিট থাকলেও গ্র্যাব রেল নেই।

ব্রেকিং এবং সাসপেনশন সিস্টেম

রয়েল এনফিল্ড ব্র্যান্ডের বাইকের উন্নত ব্রেকিং এবং সাসপেনশন সিস্টেম এটির জনপ্রিয়তার আরেকটি কারণ। সাসপেনশন সিস্টেমে বাইকটির সামনের দিকে অ্যাডজাস্টেবল প্রিলোড টেলিস্কোপিক ফর্ক এবং পিছনের দিকে ৫-স্টেপ অ্যাডজাস্টেবল টুইন গ্যাস চার্জড শক অ্যাবজর্বার সাসপেনশন ব্যবহার করা হয়েছে। এই সাসপেনশন সিস্টেম হার্ড-ব্রেক কিংবা টপ স্পিডে বাইক স্ট্যাবল রাখতে এবং ফ্রিকশন কমাতে সাহায্য করে।

ব্রেকিং সিস্টেমে, বাইকটিতে ডুয়েল চ্যানেল এবিএস ব্রেকিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয়েছে। সামনের চাকায় ২৮০ মিমি-এর ডাবল পিস্টন ক্যালিপারের ডিস্ক ব্রেক এবং পিছনের চাকায় ২৪০ মিমি-এর সিঙ্গেল পিস্টন ক্যালিপারের ডিস্ক ব্রেক ব্যবহার করা হয়েছে। এই সাসপেনশন এবং ব্রেকিং সিস্টেম নিরাপদ এবং কম্ফোর্টেবল রাইডিং-এর জন্য অসাধারণ।

হুইল এবং টায়ার

বাইকটিতে ৯-স্পোক অ্যালয় টাইপ হুইল এবং টিউবলেস টাইপ টায়ার ব্যবহার করা হয়েছে। এই হুইল বেশ বড় এবং টায়ার যথেষ্ট মোটা। এটির সামনের চাকায় ৯০/৯০-১৯/৫২পি টিএল সেকশন টায়ার, এবং পিছনের চাকায় ১২০/৮০-১৮/৬২পি টিএল সেকশন টায়ার ব্যবহার করা হয়েছে। সামনের হুইলের রিম সাইজ ১৯” ইঞ্চি এবং পিছনের হুইলের রিম সাইজ ১৮” ইঞ্চি। এই টায়ারের গ্রিপ যথেষ্ট শক্তিশালী। হুইল এবং টায়ারের পারফেক্ট মেজারমেন্টের কারণে বাইকটি টপ স্পিডে এবং কর্ণারিং-এ যথেষ্ট স্ট্যাবল থাকে।

মাইলেজ এবং স্পিড

বাইকটি মূলত রিলাক্স রাইডিং এক্সপেরিয়েন্স এবং ক্লাসিক ভিনটেজ ডিজাইনের জন্য বিখ্যাত। মাইলেজ এবং স্পিড এটির প্রধান আকর্ষণ নয়। তবে বাইকটি থেকে আপনি স্ট্যান্ডার্ড মাইলেজ এবং স্পিড পাবেন। বাইকটি থেকে আপনি প্রায় ৩০ কিমি/লিটার এভারেজ মাইলেজ এবং প্রায় ১১০ কিমি/আওয়ার টপ স্পিড পেতে পারেন।

কনসোল প্যানেল এবং ইলেকট্রিক্যাল ফিচার

রয়্যাল এনফিল্ড ব্র্যান্ডের সিগনেচার মার্ক টুইন-পড রাউন্ড ইন্সট্রুমেন্ট ক্লাস্টার এবং ক্লাসিক গোলাকার হেডল্যাম্প ডিজাইনটি আপনাকে মুগ্ধ করবে। এটির কনসোল প্যানেল সেমি-ডিজিটাল ধরণের। কনসোল প্যানেলে স্পিডোমিটার, ওডোমিটার, টেকোমিটার এবং আরপিএম মিটার রয়েছে। এখানে আপনি প্রয়োজনীয় বেশ কিছু ফিচার দেখতে পাবেন, যেমন ফুয়েল ওয়ার্নিং ইনডিকেটর, ফুয়েল গেজ, লো ব্যাটারি ইনডিকেটর, ঘড়ি ইত্যাদি।

বাইকটিতে ১২ ভোল্টের শক্তিশালী এমএফ টাইপ ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে। এই ব্যাটারি সকল ইলেকট্রিক্যাল ফিচার মেইনটেইন করতে পারে। বাইকটির সকল লাইটিং সিস্টেম হ্যালোজেন টাইপ হলেও খুবই পাওয়ারফুল। হেডলাইটটি ডিআরএল প্রজেক্টর টাইপ। এটিতে ইঞ্জিন কিল সুইচ এবং পাস লাইট সুইচ রয়েছে। ওভারঅল Royal Enfield Thunderbird 350X রিভিউ অনুযায়ী কনসোল প্যানেল এবং ইলেকট্রিক্যাল ফিচার যথেষ্ট উন্নত মানের।