Royal Enfield Continental GT রিভিউ, দাম, ফিচার এবং স্পেসিফিকেশন

Royal Enfield Continental GT হলো একটি ক্লাসিক রেট্রো স্টাইলিং ক্যাফে রেসার টাইপ মোটরবাইক। বাইকটি ক্লাসি ভিনটেজ ডিজাইন, রিলাক্স রাইডিং এবং লং-লাস্টিং পারফরম্যান্সের জন্য বিখ্যাত। বাইকটির লো-সিটিং পজিশন, টিয়ারড্রপ শেপ ফুয়েল ট্যাংক, গোলাকার ইনস্ট্রুমেন্ট ক্লাস্টার এবং ক্লিপ-অন হ্যান্ডেলবার এটিকে একটি ক্লাসি ভিনটেজ স্টাইল এনে দিয়েছে। এই ব্লগে Royal Enfield Continental GT রিভিউ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। সম্প্রতি বাইকটির আপডেটেড সংস্করণ বাজারে আনা হয়েছে, তবে এখানে পুরাতন ভার্সনটির স্পেক্স, ফিচার, ভালো-মন্দ দিক সহ আরো বিভিন্ন বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে।

ওল্ডার এবং আপডেটেড ভার্সনের মধ্যে ডিজাইনে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি, শুধু ফিচার এবং টেকনোলজিতে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। যেমন, আপডেটেড ভার্সনটির ইঞ্জিন লিকুইড কুল্ড ইনলাইন টুইন-সিলিন্ডার, পূর্বের ভার্সনটি এয়ার কুল্ড সিঙ্গেল-সিলিন্ডার। এছাড়াও সাসপেনশন, লাইটিং সিস্টেম, স্টার্টিং মেথড এবং ইলেকট্রিক ফিচারে কিছু পরিবর্তন রয়েছে।

রয়্যাল এনফিল্ড মোটরসাইকেল তাদের মজবুত বিল্ড কোয়ালিটি, ক্লাসি ডিজাইন, এবং টপ ক্লাস পারফরম্যান্সের জন্য পরিচিত। রয়েল এনফিল্ড কন্টিনেন্টাল জিটি, বাইকটি আধুনিক এবং ক্লাসিক উপকরণের সংমিশ্রণে নির্মাণ করা হয়েছে। বাইকটির এলিগেন্ট ডিজাইন, আপনার আভিজাত্য এবং রুচির পরিচয় বহন করবে।

Royal Enfield Continental GT রিভিউ

বাইকটির রিদমিক ইঞ্জিন সাউন্ড এবং থাম্পিং এক্সজস্ট নোট, এটির একটি সিগনেচার মার্ক, যা একেবারেই ইউনিক। বাইকটিতে ৬৫০ সিসির শক্তিশালী ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে। বাইকটিতে ইলেকট্রনিক ফুয়েল ইনজেকশন টেকনোলজি এবং এন্টিলক ব্রেকিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয়েছে। বাইকটি থেকে আপনি প্রায় ২৫ কিমি/লিটার এভারেজ মাইলেজ এবং প্রায় ১৬৫ কিমি/আওয়ার টপ স্পিড পেতে পারেন। দীর্ঘ ভ্রমণ এবং রিলাক্সিং রাইডিং-এর জন্য বাইকটি দুর্দান্ত।

বাইকটির স্পেশাল বৈশিষ্টগুলো হলো, এটির ভিনটেজ রেট্রো ডিজাইন, ৬৫০ কিউবিক ক্যাপাসিটির ইঞ্জিন, যেকোনো রোডে চলাচলের উপযোগিতা, ডুয়েল চ্যানেল এবিএস ব্রেকিং সিস্টেম, ৬-স্পিড গিয়ারবাক্স ইত্যাদি। বাইকটির রেভ রেঞ্জ জুড়ে মসৃণ থ্রোটল রেস্পন্স সিটি-হাইওয়ে, এমনকি অফরোডেও স্মুথ পারফরম্যান্স দিতে পারে। এটির স্টিলের টুবুলার ডাবল ক্রেডল ফ্রেম চেসিস এবং হাই পারফর্মিং সাসপেনশন সিস্টেম আপনাকে খুবই কম্ফোর্টেবল রাইডিং এক্সপেরিয়েন্স দেবে। সকল লাইটিং এবং ইলেকট্রিক্যাল সিস্টেম দুর্দান্ত কার্যকর। হুইল এবং টায়ারের মান খুবই উন্নত। এটি কিক এবং ইলেকট্রিক উভয় মেথডে স্টার্ট করা যায়।

ফিচার এবং ডিজাইন

বাইকটির মূল আকর্ষণ হলো এটির ক্লাসিক ভিনটেজ রেট্রো ডিজাইন। এটির ভিনটেজ-স্টাইলের মেটাল বডিওয়ার্ক এটিকে একটি ক্লাসি স্টাইল এনে দিয়েছে। এটির রয়েল এনফিল্ড ব্র্যান্ডের ট্রেডমার্ক ইউনিক স্টাইলের গোলাকার কনসোল প্যানেল, এবং গোলাকার হেডলাইট ডিজাইনটি যেকাউকে মুগ্ধ করবে। বাইকটির মেটালিক ফুয়েল ট্যাংক ডিজাইন, সিঙ্গেল-সিট সেটআপ এবং ক্লিপ-অন হ্যান্ডেলবার, এটিকে একটি স্পোর্টি এবং ক্লাসি রেট্রো লুক এনে দিয়েছে।

এটির বিশাল আকৃতির হুইল সাইজ এবং ফুয়েল ট্যাংকে ব্র্যান্ড লোগো ডিজাইনটি অসাধারণ। এটির ইঞ্জিন সেটআপ ফুটপেগ প্লেসমেন্ট, এবং বার-এন্ড মিরর যে কাউকে মুগ্ধ করবে। বাইকটির লম্বাকৃতির এক্সজস্ট ব্যারেল, মার্ডগার্ড এবং টেইল ল্যাম্পটি যেকারো নজর কাড়বে। রাউন্ড ইন্সট্রুমেন্ট ক্লাস্টার এবং ছোট নেভিগেশন ডিসপ্লে এটিকে একটি এলিগেন্ট স্টাইল এনে দিয়েছে। সম্পূর্ণ বাইকটি ডাবল ক্রেডল স্টিল টুবুলার ফ্রেম চেসিসের উপর বসানো হয়েছে।

ইঞ্জিন পারফরম্যান্স

বাইকটিতে ৬৪৮.০ সিসি ডিসপ্লেসমেন্ট ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে। এই ইঞ্জিন ৪-স্ট্রোক, এয়ার কুল্ড, এবং সিঙ্গেল সিলিন্ডার ফিচার বিশিষ্ট। এছাড়াও ইঞ্জিনে সিঙ্গেল ওভারহেড ক্যামস্যাফট এবং ফুয়েল ইনজেকশন অ্যাডভান্টেজ পাবেন। এটি ৭২৫০ আরপিএমে ৪৭.০ বিএইচপি সর্বোচ্চ পাওয়ার এবং ৫২৫০ আরপিএমে ৫২.০ এনএম সর্বোচ্চ টর্ক উৎপন্ন করতে পারে। পাওয়ার এবং টর্ক জেনারেশন দুর্দান্ত হওয়ায় বাইকটির স্পিড এবং অ্যাক্সিলারেশন খুবই ভালো।

বাইকটির ট্রান্সমিশন সিস্টেম ম্যানুয়াল, এখানে ওয়েট মাল্টিপ্লেট ক্লাচ সহ ৬-স্পিড গিয়ারবক্স ইনস্টল করা হয়েছে। ইঞ্জিনের বোর এবং স্ট্রোক যথাক্রমে ৭৮ মিমি এবং ৬৭.৮ মিমি। এটির কম্প্রেশন রেশিও ৯.৫:১। ইঞ্জিনটি খুবই স্মুথ এবং লিনিয়ার পাওয়ার ডেলিভারির জন্য পরিচিত, যা এটিকে সিটি রাইডিং এবং হাইওয়ে ক্রুজিং উভয়ের জন্য উপযুক্ত করে তুলেছে।

বডি ডাইমেনশন

ক্যাফে রেসার টাইপ বাইকের বডি স্ট্রাকচার অন্যান্য বাইকের থেকে কিছুটা আলাদা হয়ে থাকে। রয়েল এনফিল্ড কন্টিনেন্টাল জিটি, বেশ বড় এবং ভারী একটি মোটরবাইক। বাইকটির ওভারঅল দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং উচ্চতা যথাক্রমে ২১২২ মিমি, ৭৪৪ মিমি, এবং ১০২৪ মিমি। এটির হুইলবেস ১৩৯৮, যা কর্ণারিং এবং টপ স্পিডে বাইক ব্যালান্স রাখতে সহায়তা করে। এটির গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স বেশ ভালো, ১৭৪ মিমি, তাই অফরোডে এবং অসমতল রাস্তাতেও আপনি কনফিডেন্স পাবেন। এটির ফুয়েল ট্যাংকের ধারণ ক্ষমতা ১২.৫ লিটার। বাইকের সিটিং পজিশন সিঙ্গেল-সিট টাইপ এবং খুবই কম্ফোর্টেবল। সিটিং পজিশনের উচ্চতা ৭৯৩ মিমি। এটিতে পিলিয়ন সিট এবং গ্র্যাবরেল রয়েছে। বাইকটিতে স্টিলের টুবুলার ডাবল ক্র্যাডল ফ্রেমের চেসিস ব্যবহার করা হয়েছে।

ব্রেকিং এবং সাসপেনশন সিস্টেম

রয়েল এনফিল্ড ব্র্যান্ডের সব বাইকেরই ব্রেকিং এবং সাসপেনশন সিস্টেম খুবই উন্নতমানের। এই বাইকটির সাসপেনশন সিস্টেমে সামনের দিকে ৪১ মিমি-এর টেলিস্কোপিক ফর্ক সাসপেনশন  (১১০ মিমি ট্রাভেল) এবং পিছনের দিকে টুইন, কয়েল-ওভার শক (৮৮ মিমি ট্রাভেল) সাসপেনশন ব্যবহার করা হয়েছে। এই সাসপেনশন সিস্টেম যেকোনো ধাক্কা অ্যাবজর্ব করতে পারে, হার্ড ব্রেক কিংবা টপ স্পিডে রাইডিং স্ট্যাবিলিটি বাড়ায় এবং ইঞ্জিনের ফ্রিকশন কমায়।

বাইকটিতে ডুয়েল চ্যানেল এবিএস ব্রেকিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয়েছে। সামনে পিছনে উভয় চাকায় ডিস্ক ব্রেক বসানো হয়েছে। এই ব্রেকিং সিস্টেম খুবই হাই-পারফর্মিং এবং নিরাপদ।

হুইল এবং টায়ার

বাইকটিতে স্পোক টাইপ হুইল এবং টিউবলেস টাইপ টায়ার ব্যবহার করা হয়েছে। এই হুইল বেশ বড় এবং টায়ার যথেষ্ট মোটা। এটির সামনের চাকায় ১০০/৯০-১৮ সেকশন টায়ার, এবং পিছনের চাকায় ১৩০/৭০-১৮ সেকশন টায়ার ব্যবহার করা হয়েছে। উভয় হুইলের রিম সাইজ ১৮ ইঞ্চি। বেশ ভারী বাইক হিসেবে হুইল এবং টায়ারের এই মেজারমেন্ট পারফেক্ট। হুইলবেস বড় হওয়ায় টপ স্পিডে এবং কর্ণারিং-এ বাইক স্ট্যাবল থাকে। এই টায়ার ভেজা কিংবা কর্দমাক্ত রাস্তায় এবং হার্ড ব্রেক করার সময় স্কিড করে না।

মাইলেজ এবং স্পিড

ক্যাফে রেসার টাইপ বাইক থেকে আপনি দুর্দান্ত স্পিড এবং কম্ফোর্টেবল রাইডিং এক্সপেরিয়েন্স পাবেন। তবে এই ধরণের বাইক থেকে তেমন বেশি মাইলেজ আশা করা যায় না। বাইকটি থেকে আপনি প্রায় ২৫ কিমি/লিটার এভারেজ মাইলেজ এবং প্রায় ১৬৫ কিমি/আওয়ার টপ স্পিড পেতে পারেন। বাইকটির ফুয়েল সাপ্লাই সিস্টেম, ফুয়েল ইনজেকশন টেকনোলজি হওয়ায় সঠিক গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল এবং উন্নত মানের ফুয়েল ব্যবহার করার উপদেশ দেয়া হয়েছে।

কনসোল প্যানেল এবং ইলেকট্রিক্যাল ফিচার

বাইকটির রয়্যাল এনফিল্ড ব্র্যান্ডের সিগনেচার মার্ক রাউন্ড ইন্সট্রুমেন্ট ক্লাস্টার এবং ক্লাসিক নেভিগেশন ডিসপ্লে ডিজাইনটি আপনাকে মুগ্ধ করবে। এটির কনসোল প্যানেল অ্যানালগ ধরণের। কনসোল প্যানেলে স্পিডোমিটার, ওডোমিটার, টেকোমিটার, আরপিএম মিটার সহ প্রয়োজনীয় কিছু ফুয়েল ইনডিকেটর রয়েছে।

বাইকটিতে বেশ পাওয়ারফুল ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে। এই ব্যাটারি সকল ইলেকট্রিক্যাল ফিচার মেইনটেইন করতে পারে। বাইকটির সকল লাইটিং সিস্টেম হ্যালোজেন টাইপ হলেও খুবই কার্যকর। এটিতে ইঞ্জিন কিল সুইচও রয়েছে। ওভারঅল Royal Enfield Continental GT রিভিউ অনুযায়ী কনসোল প্যানেল এবং ইলেকট্রিক্যাল ফিচার মোটামুটি উন্নত মানের।