কমিউটার মোটরসাইকেল বলতে আমরা সেই সকল মোটরসাইকেল কে বুঝে থাকি যা মূলত দৈনিক যাতায়াতের উদ্দেশ্যে ডিজাইন করা হয়। সাধারণত এগুলা হাইওয়ে বা শহরে পরিবেশে চলার জন্য বেশি উপযোগী। এই মোটরসাইকেল গুলোর ব্যবহারিকতা, জ্বালানি দক্ষতা এবং স্বল্প থেকে মাঝারি দূরত্বের ভ্রমণের জন্য ব্যবহার সহজ করার জন্য তৈরি করা হয়েছে।
কমিউটার মোটর সাইকেলগুলো সব সময় জ্বালানি দক্ষতা, ইঞ্জিনের আকার, লাইট ওয়েট, আরামদায়ক রাইডিং পজিশন, স্বল্প মূল্য, নির্ভরযোগ্যতা এবং স্থায়িত্ব ইত্যাদি দিকে লক্ষ্য করে তৈরি করা হয়। যেন বাইকটি আপনার প্রতিদিনের যাতায়াতের প্রয়োজনের জন্য, পরিবহনের জন্য এবং দক্ষ মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। সাধারণত শহর এবং শহরতলির পরিবেশের জন্য উপযুক্ত, সাশ্রয়ী, আরাম এবং কার্যকারিতার ভারসাম্য প্রদান করে।
যারা অফিসে, কাছে বা মাঝারি দূরত্ব প্রতিদিন অতিক্রম করে থাকেন তাদের জন্য উপযোগী এই কমিউটার বাইক গুলি। যা আপনার দৈনন্দিন যাতায়াতকে করে তুলবে মসৃণ এবং আনন্দদায়ক স্বাচ্ছন্দের সাথে।
৫ টি সেরা কমিউটার মোটরসাইকেল সম্পর্কে আলোচনা :
Honda CB Shine SP
Honda CB Shine SP একটি জনপ্রিয় কমিউটার সেগমেন্ট এর বাইক। গ্রাহকদের চাহিদা বিবেচনা করে এই মোটরসাইকেলটি বাজারে আনা হয়েছে যা ১২৫ সিসির মধ্যে একটি বাজেট একটি বান্ধব, ভালো ইঞ্জিন পারফরম্যান্স দেয় এবং বিল্ড কোয়ালিটি দুর্দান্ত। দৈনন্দিন জীবনে যাতায়াত ও কর্মক্ষেত্রের জন্য বাইকটি খুবই যুগ উপযোগী। কমিউটার বাইক হিসেবে এই বাইকটির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বাজারে। এই বাইক এভারেজ ৫০ কিমি/লি মাইলেজ দেয়। এটি হাইওয়েতে ৬০ কিমি/লি এবং সিটি রাইডিংয়ে ৫০ কিমি/লি মাইলেজ দিতে পারে।
(১) ইঞ্জিন – বাইকটিতে ১২৫ সিসি, এয়ার কুলড, ৪-স্ট্রোক, একক সিলিন্ডার, স্পোক ইগনিশন ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে। বাইকটি থেকে ৭৫০০ আর পি এমে ১০.১৬ বি এইচ পি সর্বোচ্চ পাওয়ার এবং ৫৫০০ আরপিএমে ১০.৩০ এন এম টর্ক উৎপন্ন করতে পারে। এটি কিক স্টার্ট এবং ইলেকট্রিক স্টার্ট মেথড উভয় ভাবেই চালু করা যায়।
(২) বডি ডাইমেনশন – বাইকটির সামগ্রিক দৈর্ঘ্য প্রস্থ এবং উচ্চতা যথাক্রমে ২০০৭ মিমি, ৭৬২ মিমি এবং ১০৮৫ মিমি।এটির গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স এবং হুইলবেস যথাক্রমে ১৬০ মিমি এবং ১২৬৬ মিমি।
(৩) ব্রেকিং এবং সাসপেনশন – এই বাইকে টুইন শক সাসপেনশন ব্যবহার করা হয়েছে যা কমিউটার মোটরসাইকেলের জন্য যথেষ্ট ভালো। বাইকের সামনে টেলিস্কোপিক ফর্ক সাসপেনশন এবং পেছনে স্প্রিং লোডেড হাইড্রলিক টাইপ সাসপেনশন ব্যবহার করা হয়েছে। এই বাইকের সামনের চাকায় ডিস্ক ব্রেক এবং পেছনে চাকায় ড্রাম ব্রেক ব্যবহার করা হয়েছে। যা এই বাইকটির জন্য সন্তুষ্ট জনক।
(৪) টায়ার এবং হুইল – রিভিউ অনুযায়ী এই বাইকের টায়ার খুবই ভালো মানের। এই বাইকে এইচইটি টায়ার ব্যবহার করা হয়েছে যা বাইকের রোলিং রেসিস্টেন্স কমিয়ে আনে। এবং উভয় হুইল টিউবলেস।
Honda Dream 110
মোটরসাইকেলের বাজারে Honda একটি পরিচিত নাম। ১১০ সিসি সেগমেন্টের যতগুলো বাইক বাংলাদেশে রয়েছে তাদের মধ্যে হোন্ডা ড্রিম ১১০ বাইকটি একটি বিশেষ জায়গা দখল করে আছে। বাইকটি তার স্বল্প মূল্য, স্থায়িত্ব এবং গতির কারণে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কম খরচে যাদের বেশ মানসম্মান কমিউটার বাইক দরকার তারা এই বাইকটি আপনাদের পছন্দের তালিকায় রাখতে পারেন। বাইকটি টপ স্পিড প্রায় ৮৬কিমি/ ঘণ্টা এবং স্বাভাবিক রাস্তায় এটি প্রায় ৬০কিমি/ লিটার মাইলেজ দেয়।
(১) ইঞ্জিন – হোন্ডার এই কমিউটার বাইকটিতে রয়েছে ১১০ সিসির পাওয়ারফুল ইঞ্জিন, যেটি ৪ স্ট্রোক বিশিষ্ট, সিঙ্গেল সিলিন্ডার, বিএস-৪ এবং এয়ার কুল্ড। ইঞ্জিনটি ৭৫০০ আরপিএম -এ ৮.২৪৭ বিএইচপি ম্যাক্স পাওয়ার এবং ৫৫০০ আরপিএম -এ ৯.০৯ নিউটন মিটার ম্যাক্স টর্ক উৎপন্ন করতে সক্ষম।
(২) বডি ডাইমেনশন – বাইকটির দৈর্ঘ্য ২০২০ মিমি, প্রস্থ ৭৩৭ মিমি, এবং উচ্চতা ১০৬১ মিমি। এছাড়াও বাইকটির হুইলবেস ১২৮৫ মিমি এবং গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স ১৮০ মিমি, যা বাংলাদেশের রাস্তার জন্য যথেষ্ট। বাইকটির সিট হাইট ৭৭৫মিমি।
(৩) ব্রেকিং এবং সাসপেনশন – বাইকটির সামনে ও পিছনে উভয় দিকেই রয়েছে ১৩০ মিমি ড্রাম ব্রেক। উভয় টায়ারই টিউবলেস এবং টায়ারে অ্যালয় হুইল রিম বসানো। এই বাইকটির সামনে রয়েছে টেলিস্কোপিক ফর্ক সাসপেনশন এবং পিছনে রয়েছে ৫ স্টেপ অ্যাডজাস্টেবল স্প্রিং লোডেড হাইড্রোলিক শক অ্যাবজরবার সাসপেনশন।
(৪) টায়ার এবং হুইল – বাইকটির সামনের এবং পিছনের উভয় টায়ারের সাইজ ৮০/১০০- ১৮। উভয় টায়ারই টিউবলেস এবং টায়ারে অ্যালয় হুইল রিম বসানো।
Suzuki Hayate
সুজুকি হায়তে বাইকটি তার বাহ্যিক সৌন্দর্য, এবং কর্মক্ষমতার কারণে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বাইকটির ওভারঅল হাইট এবং ওয়েট বেশ ব্যালেন্সড।বাইকটির জ্বালানি ধারণ ক্ষমতা বেশি হওয়ার কারণে কমিউটার বাইক হিসেবে আলাদা সুবিধা দিতে সক্ষম। বাইকটি টপ স্পিড ৮০ কিমি / ঘণ্টা এবং স্বাভাবিক রাস্তায় এটি প্রায় ৫৫ কিমি / লিটার মাইলেজ দেয়।
(১) ইঞ্জিন – বাইকটিতে সংযুক্ত করা হয়েছে ১১২.৮ সিসির পাওয়ারফুল ইঞ্জিন যা ৪ স্ট্রোক বিশিষ্ট, সিঙ্গেল সিলিন্ডার এয়ার কুল্ড ইঞ্জিন। ইঞ্জিনটি ৮.৩ বিএইচপি @৭৫০০ আরপিএম ম্যাক্স পাওয়ার উৎপন্ন করতে সক্ষম। বাইকটি ৮.৮ নিউটন মিটার @৫৫০০ আরপিএম ম্যাক্স টর্ক প্রদান করতে পারে।
(২) বডি ডাইমেনশন – বাইকটির ওভারঅল দৈর্ঘ্য ২০৩০ মিমি, প্রস্থ ৭২০ মিমি এবং উচ্চতা ১০৭০ মিমি। এছাড়াও হুইলবেস ১২৬০ মিমি এবং গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স ১৬৫ মিমি ।
(৩) ব্রেকিং এবং সাসপেনশন – বাইকটির সামনে এবং পেছনে উভয় টায়ারেই রয়েছে ড্রাম ব্রেক। বাইকটির সামনের দিকে রয়েছে টেলিস্কোপিক ফর্ক সাসপেনশন এবং পেছনের দিকে রয়েছে ডুয়েল শক রিয়ার সাসপেনশন। উভয় সাসপেনশনই কয়েল স্প্রিং এবং অয়েল ডাম্পের।
(৪) টায়ার এবং হুইল – বাইকটির সামনের টায়ার ৭০/১০০- ১৭ মি / সি ৪০ পি সাইজের এবং পেছনের টায়ার ৮০/১০০- ১৭ মি / সি ৫৩ পি সাইজের। উভয় টায়ারই টিউবলেস। উভয় টায়ারেই সংযুক্ত আছে ১৭ ইঞ্চির অ্যালয় হুইলবেস।
Suzuki GSX 125
আকর্ষণীয় লুকিং, সর্বোচ্চ মাইলেজ, সকল বয়সের মানুষের জন্য উপযোগী, বাজেট বান্ধব দাম ইত্যাদি এই বাইকটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এছাড়াও বাইকটির ইলেকট্রিক্যাল এবং কনসোল প্যানেল বেশ উন্নত মানের। এলইডি ফিচারের লাইট বাইকটিকে অন্য মাত্রা দান করেছে। সামগ্রিকভাবে বাইকটি তার কোয়ালিটি এবং স্থায়িত্বের কারণে ভাই প্রেমীদের মনে জায়গা করে নিয়েছে।
(১) ইঞ্জিন – বাইকটিতে সংযুক্ত করা হয়েছে ১২৫ সিসির পাওয়ারফুল ইঞ্জিন। ইঞ্জিনটি ১০.৪৫ বিএইচপি @ ৯০০০ আরপিএম ম্যাক্স পাওয়ার উৎপন্ন করতে সক্ষম। বাইকটি ৯.২ নিউটন মিটার @ ৭০০০ আরপিএম ম্যাক্স টর্ক প্রদান করতে পারে।
(২) বডি ডাইমেনশন – বডি ডাইমেনশনে রয়েছে ১৯৯০×৭৫৫×১০৭৫ এর মতো একটি বিশালতর ফিটনেস। সুজুকি কম্পিউটরাইজড এবং সিলড করা হয়েছে উন্নত সিলভার কোটিং এবং সিলভার-নিকেল-ফসফরাস-কার্বাইডের কোটিং দ্বারা।
(৩) ব্রেকিং এবং সাসপেনশন – বাইকটিতে আপনি একই সাথে দুই ধরণের ব্রেকিং সুবিধা পাচ্ছেন। একটা হচ্ছে ABS (anti-locking system) এবং অন্যটা CBS সিস্টেম। সাসপেনশন হিসাবে সুজুকিতে ব্যবহৃত হয়েছে টেলিস্কোপিক, কয়েল স্প্রিং এবং এর ফ্রন্ট হুয়েলে ব্যবহৃত হয়েছে ম ওয়েল ড্যাম্পডের সাসপেনশন। অন্যদিকে রেয়ার সাইড হুয়েলে ব্যবহৃত হয়েছে হাইড্রোলিক স্প্রিং ড্যাম্পেনিং ডুয়েল শক সাসপেনশন।
(৪) টায়ার এবং হুইল – Suzuki GSX-125 এ রয়েছে উন্নতমানের ব্রেক ও টায়ার যা এর বডির ডিজাইনের সাথে মানানসই এবং দূরের রাস্তায় চলার ও রাইডিং এর জন্যে টেকসই। এর একেকটা ফ্রন্ট ও ব্রক টায়ারের বেইস মূলত ২.৭৫/১৮ চওড়া এবং টিউবলেস।
Zaara Digital V2
Zaara Digital V2 একটি ডিসেন্ট ডিজাইনের এন্ট্রি-লেভেলর কমিউটার টাইপ মোটরসাইকেল। স্বল্প মূল্য, বেশি মাইলেজ এবং লং লাস্টিং পারফরম্যান্স এর কারণে বাইকটি বেশ সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়েছে।
বাইকটির স্পেশাল বৈশিষ্ট্য হল – ডিজিটাল ইন্সট্রুমেন্ট প্যানেল, পাওয়ারফুল ইঞ্জিন, কমফোর্টেবল সিটিং পজিশন, গুড লাইটিং সিস্টেম, স্টিল ডায়মন্ড ফ্রেম চেসিস, সিঙ্গেল ডিস্ক ব্রেকিং সিস্টেম, ফুয়েল ক্যাপাসিটি ভালো ইত্যাদি।
বাইকটি থেকে আপনি প্রায় ৫০ কিমি/লিটার এভারেজ মাইলেজ এবং প্রায় ৯০ কিমি/আওয়ার টপ স্পিড পেতে পারেন।
(১) ইঞ্জিন – Zaara Digital V2 বাইকটিতে ১০৬.৬৭ সিসি ডিসপ্লেসমেন্ট ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে। এই ইঞ্জিন সিঙ্গেল সিলিন্ডার, ৪ স্ট্রোক এবং এয়ারকুলড বিশিষ্ট। এছাড়াও ইঞ্জিনটি ২-ভালব এবং সিঙ্গেল ওভারহেড ক্যামস্যাফট বিশিষ্ট। এটি ৫০০০ আরপিএমে ৭.৭০ বিএইচপি সর্বোচ্চ পাওয়ার এবং ৬০০০ আরপিএমে ৭.৫০ এনএম সর্বোচ্চ টর্ক উৎপন্ন করতে পারে।
(২) বডি ডাইমেনশন – বাইকটির দৈর্ঘ্য প্রস্থ উচ্চতা অর্থাৎ পুরো বডি ডাইমেনশন বেশ সামঞ্জস্যপূর্ণ। গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স ১৬০ মিমি এবং বাইকটির সামগ্রিক ওজন ১০৭ কেজি। বাইকটির ফুয়েল ট্যাংকের ধারণ ক্ষমতা ১২ লিটার।
(৩) ব্রেকিং এবং সাসপেনশন – বাইকের সামনের দিকে সাধারণ হাইড্রোলিক টেলিস্কোপিক ফর্ক এবং পেছনের দিকে সুইংআর্মের সাথে যুক্ত স্প্রিং লোডেড টুইন শক সাসপেনশন সিস্টেম ব্যবহার করা হয়েছে। বাইকটির সামনের চাকায় সিঙ্গেল হাইড্রোলিক ডিস্ক এবং পেছনের চাকায়ের ড্রাম্প টাইপ ব্রেক ব্যবহার করা হয়েছে।
(৪) টায়ার এবং হুইল – বাইকটিতে ৫-স্পোক অ্যালয় টাইপ হুইল এবং টিউবলেস টাইপ টায়ারব্যবহার করা হয়েছে। সামনের চাকায় ২.৭৫-১৭ সেকশন টায়ার এবং পিছনের চাকায় ৩.০০-১৭ সেকশন টায়ার ব্যবহার করা হয়েছে। উভয় হুইলের রিম সাইজ ১৭” ইঞ্চি। এই হুইল এবং টায়ার দেখতে সাধারণ মানের হলেও খুবই কমিউটিং-ফোকাসড।
পরিসংহার
দৈনন্দিন ব্যবহারের উপযোগী কমিউটার বাইক গুলির দাম বাজেট বান্ধব হয়ে থাকে। তাছাড়া কমিউটার বাইক গুলোর স্থায়িত্ব এবং কর্মদক্ষতা মানুষকে মুগ্ধ করে। আপনার যদি দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য কমিউটার বাইক প্রয়োজন হয় আপনি নিশ্চিন্তে উপরে উল্লেখিত গাড়ি গুলি আপনার সংগ্রহে রাখতে পারেন।