মোটরসাইকেলের পোশাক
মোটরসাইকেলের একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মোটরসাইকেলের পোশাক। মোটরসাইকেলের পোশাক যেমন বড় দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে, তেমনি বড় কোনো দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়ার ক্ষেত্রেও অনেক বেশি অবদান রাখে। আর তাই জেনে নেওয়া জরুরি মোটরসাইকেল রাইডিং-এর জন্য পারফেক্ট ড্রেস গুলো কি কি এবং মোটরসাইকেলের পোশাকের যত্ন কীভাবে নিতে হবে।
মোটরসাইকেল চালানোর জন্য পোশাক
মোটরসাইকেলের চালানোর ক্ষেত্রে বাইক, ইঞ্জিন, ব্যাটারি এগুলো যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি মোটরসাইকেলের পোশাকও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাই পোশাক নির্বাচনে ও পরিধানে যথেষ্ট জ্ঞান থাকা জরুরি। আসলে সকল ড্রেস সবসময়ের জন্য উপযুক্ত নয়। একেক সময় একেক গেট-আপ নিয়ে রাইড করতে হয়, সেই সাথে খেয়াল রাখতে হয় ফ্যাশনের দিকটাও।
মোটরসাইকেল রাইডিং-এর জন্য পারফেক্ট ড্রেস
পারফেক্ট ড্রেস সেটাই যা আপনাকে নিরাপত্তার পাশাপাশি আরামদায়ক রাইডিং অনুভূতিও দিবে। একজন বাইকার হিসেবে, আপনি নতুন কিংবা অনেক এক্সপেরিয়েন্সড, অবশ্যই কিছু বিষয় না জানলেই নয়। তার মধ্যে অন্যতম মোটরসাইকেল রাইডিং-এর সময় কোন ধরণের পোশাক কখন, কেনো, কীভাবে ব্যবহার করবেন। চলুন সেগুলোই জেনে নেই আজকের এই ব্লগে।
হেলমেট
হেলমেট একটা বাইকারের জন্য কতোটা গুরুত্বপূর্ণ তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। বাইক চালালে হেলমেট পড়তেই হবে। বাইকিং জগতে আপনি বিভিন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনার স্বীকার হতে পারেন, আপনি তখন উপলব্ধি করবেন হেলমেট কতোটা প্রয়োজন। এইজন্য হেলমেটকে বলা হয় বাইকারের মুকুট। অনেকেই নানান অজুহাতে হেলমেট পড়তে চান না, কাজটি একদমই উচিত নয়।
বাজারে বিভিন্ন ধরণের, মানের, দামের, রঙের হেলমেট পাওয়া যায়। চেষ্টা করবেন এমন রঙের হেলমেট নিতে, যেগুলো দূর থেকেও ফোকাসে পড়বে। তবে বেশি পুরোনো হেলমেট পড়বেন না। চেষ্টা করবেন, একটু দাম বেশি দিয়ে হলেও ভালো মানের হেলমেট ব্যবহার করার।
গ্লাভস
ভালো গ্রিপ পাওয়ার জন্য গ্লাভস ব্যবহার করা জরুরি। অনেকেই খালি হাতেই ভালো গ্রিপ পান। তবে ধীরে ধীরে হয়তো হাতে নরম তালু শক্ত হয়ে যেতে পারে। তাই গ্লাভস ছাড়া বাইক চালানো উচিত নয়।
বাজারে বিভিন্ন ধরণের গ্লাভস পাওয়া যায়, একেক মৌসুমকে কেন্দ্র করে একেক রকম গ্লাভস পাওয়া যায়। চেষ্টা করবেন, মৌসুমভেদে গ্লাভসগুলোর সঠিক ব্যবহার জেনে নিতে।
জ্যাকেট
জ্যাকেট হিসেবে এমন জ্যাকেট পড়তে হবে যেগুলো শরীরকে যথেষ্ট প্রোটেকশন দিতে পারে, এক্ষেত্রে স্কিন টাইপ জ্যাকেট গুলো না পড়াই ভালো। লেদারের জ্যাকেটগুলো খুব ভালো, এগুলো যেমন ভালো প্রোটেকশন দিতে পারে, তেমনি যেকোনো মৌসুমে এগুলো বেশ আরামদায়ক।
বুটস
রাইডিং-এর সময় ভালো মানের শু জুতো ব্যবহার করতে হয়। এক্ষেত্রে দেখা যায়, অনেকেই ওয়ার্ক বুটস, হেভি ওয়াকিং বুটস ব্যাবহার করেন, যেগুলো গোড়ালিকে যেকোনো ক্ষয়-ক্ষতি থেকে রক্ষা দেয়।
ট্রাউজার
মোটরসাইকেল রাইডিং-এর ক্ষেত্রে যতটা সম্ভব কমফোর্টেবল থাকতে হবে। আর এইজন্য ভালো, আরামদায়ক ট্রাউজার ব্যবহার করতে পারেন। এতে খুব সহজেই আপনি মুভ করতে পারবেন। তাছাড়া এগুলো অনেক আরামদায়কও বটে।
গরমের সময় মোটরসাইকেলের পোশাক
যেহেতু বাংলাদেশ গ্রীষ্ম প্রধান দেশ, তাই সারা বছর কম-বেশি গরম থাকেই। তাই চেষ্টা করবেন গরমের দিনে লাইট রঙের জামা পড়ার। পাশাপাশি এমন টি-শার্ট পড়বেন যেগুলো ঘাম শুষে নেয় ও আপনি আরামের সাথে বাইক চালাতে পারেন। প্যান্টের ক্ষেত্রে জিন্স খুব ভালো চয়েজ, কারণ দেখা যায়, দুর্ঘটনার সময় জিন্স পায়ের অনেক ক্ষয়-ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। অবশ্যই কালো রঙের কাপড় পড়া থেকে বিরত থাকবেন, কারণ কালো রঙের শোষণ ক্ষমতা অনেক বেশি, যার কারণে শরীর জলদি উত্তপ্ত হয়।
বৃষ্টির দিনে মোটরসাইকেলের পোশাক
বৃষ্টির দিনে মোটরসাইকেল চালানো অন্যরকম একটা অনুভূতি। তবে সবসময় তা আনন্দদায়ক হয় না, বরং বৃষ্টির দিনে মোটরসাইকেল চালানোর সময় সতর্ক না থাকলে বড় ধরণের দুর্ঘটনার সম্মুখীন হতে পারেন। এইজন্য বিশেষ করে বর্ষাকালে রেইনকোট, ভালো মানের হেলমেট ও জুতো ব্যাবহার করবেন।
শীতের দিনে মোটরসাইকেলের পোশাক
শীতের দিনে বাইক চালানো মাঝে মাঝে খুবই মজার আবার শীত যখন বেশি পড়ে তখন বাইক চালানো বেশ কষ্টসাধ্য মনে হয়। শীতের বাতাসে প্রচুর ধুলোবালি উড়ে, তাই এমন ধরণের হেলমেট ব্যবহার করবেন, যেগুলো ধুলোবালি থেকে আপনার চোখ-মুখকে সুরক্ষা দিবে। এছাড়াও ভালো মানের জ্যাকেট, গ্লাভস, প্যান্ট পড়বেন। এগুলো আপনাকে উষ্ণতা দিবে এবং আপনি আরামদায়ক রাইডিং এক্সপেরিয়েন্স পাবেন।
রাতে মোটরসাইকেলের পোশাক
রাতে বাইক চালাতে হয় বেশ সাবধানতার সাথে। বিশেষ করে হাইওয়ে রাইডিং-এর ক্ষেত্রে এমন পোশাক পরিধাণ করতে হয় যেগুলো সেইফটি নিশ্চিত করতে পারে। ভারী কাপড় পড়বেন, তবে এতোটা ভারীও না যা আপনাকে অস্বস্তি ফিল দিবে। উজ্জ্বল রঙের জামা ও হেলমেট পড়বেন, যাতে দূর থেকেও আপনাকে অন্যান্য গাড়ীর চালকরা দেখতে পারে।
মোটরসাইকেলের পোশাকের যত্ন
পোশাক সম্পর্কে তো জানলেন। এখন আসুন জেনে নেই, সেগুলোর যত্ন কীভাবে নিবেন।
- মোটরসাইকেলের হেলমেটের যত্নের ক্ষেত্রে ভাইসর নরম কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করবেন, যাতে ভাইসরে কোনো দাগ না পড়ে।
- রেইনকোট একবার ব্যাবহার করে ধুয়ে ফেলার চেষ্টা করবেন, কারণ বৃষ্টির দিনে কাঁদা লাগাতে পারে, না ধুয়ে পড়লে শরীরে রোগ-ব্যাধি দেখা দিতে পারে।
- বুটস বা শু জুতো শুকনো রাখার চেষ্টা করবেন। রোদে দিবেন, এতে করে জুতো পরবর্তীতে পড়েও আরাম পাবেন।
- একের বেশি জ্যাকেট কিনবেন, এতে শীতকালে একটি ধুয়ে দিলে শুকাতে দেরী হলেও আরেকটি পড়তে পারবেন।
পরিশেষে
আমরা চেষ্টা করেছি মোটরসাইকেল রাইডিং-এর সময় ব্যাবহারযোগ্য পোশাক গুলো নিয়ে আলোপাত করার। আশা করি এই ব্লগ পড়ে উপকৃত হবেন এবং রাইডিং-এর সময় সঠিক পোশাকটি বেছে নিতে পারবেন।