রয়্যাল এনফিল্ড হলো মোটরসাইকেলের জগতে একটি আইকনিক ব্র্যান্ড। এই ব্র্যান্ডের বাইকগুলো আভিজাত্য, ক্লাসিক ডিজাইন, ভিনটেজ-স্টাইল এবং শক্তিশালী ইঞ্জিন পারফরম্যান্সের জন্য বিখ্যাত। ১৯০১ সালে যাত্রা শুরু করা এই কোম্পানী এখনো তাদের ভিন্টেজ স্টাইল এবং হাই-পারফর্মিং বাইক উৎপাদন করে গ্রাহক জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে। রয়াল এনফিল্ডের মতো এমন ক্লাসিক, টাইমলেস ডিজাইন ও ওপেন রোড বাইক, খুব কম কোম্পানীই লম্বা সময় ধরে গ্রাহকের আকর্ষণ ধরে রেখেছে। এই ব্র্যান্ডের বাইক থেকে আপনি বছরের পর বছর দুর্দান্ত পারফর্ম্যান্স পাবেন।
৫ টি সেরা ৩৫০ সিসি রয়েল এনফিল্ড বাইক নিয়ে আলোচনা –
(১) ROYAL ENFIELD CLASSIC 350
এটি রয়্যাল এনফিল্ডের একটি জনপ্রিয় ক্যাফে রেসার বাইক। বাইকটির মূল আকর্ষণ হলো এটির রেট্রো স্টাইলের মিনিমালিস্ট ডিজাইন। বাইকটির ক্যাসকেট হেডল্যাম্প, হলমার্ক টিয়ারড্রপ শেপ ফুয়েল ট্যাংক এবং রিদমিক থাম্পিং এক্সজস্ট নোট, এটির একটি সিগনেচার ফিচার। বাইকটি থেকে আপনি প্রায় ৪০ কিমি/লিটার এভারেজ মাইলেজ এবং প্রায় ১৩০ কিমি/আওয়ার টপ স্পিড পেতে পারেন। বাইকটি টপ-স্পিড কিংবা রোমাঞ্চকর রাইডিং-এর জন্য তৈরী করা হয়নি, বরং খুবই কম্ফোর্টেবল এবং রিলাক্সিং ক্রুজিং রাইডিং-এর জন্য এটি পরিচিত।
বাইকটির স্পেশাল বৈশিষ্টগুলো হলো, এটির ক্লাসিক ভিনটেজ স্টাইল, জে-প্লাটফর্ম ইঞ্জিন, এন্টিলক ব্রেকিং সিস্টেম, ইএফআই, ৫-স্পিড কনস্ট্যান্ট মেশ গিয়ারবক্স, টুইন ডাউনটিউব স্পাইন ফ্রেমের চেসিস ইত্যাদি। এটি কিক এবং ইলেকট্রিক উভয় মেথডে স্টার্ট করা যায়। দূর-দূরান্তে কম্ফোর্টেবল ভাবে দীর্ঘ ভ্রমণের জন্য বাইকটি অনন্য।
সুবিধা
- জে-প্লাটফর্ম ইঞ্জিন
- এবিএস ব্রেকিং সিস্টেম
- ইলেকট্রনিক ফুয়েল ইনজেকশন টেকনোলজি
- টুইন ডাউনটিউব স্পাইন ফ্রেম চেসিস
- USB পোর্ট
অসুবিধা
- বেশ ভারী বাইক
- ইলেকট্রিক্যাল ফিচার কম
- পিলিয়ন সিট নেই
(২) ROYAL ENFIELD BULLET 350
এটি একটি চমৎকার ক্লাসিক ডিজাইনের ভিনটেজ স্টাইলের ক্রুইজার টাইপ মোটরবাইক। বাইকটি ক্লাসিক ভিনটেজ ডিজাইন, রিলাক্সিং রাইডিং এক্সপেরিয়েন্স এবং আইকনিক থাম্পিং সাউন্ডের জন্য বিখ্যাত। এটি থেকে আপনি প্রায় ৩৫ কিমি/লিটার এভারেজ মাইলেজ এবং প্রায় ১১০ কিমি/আওয়ার টপ স্পিড পেতে পারেন। বাইকটি থেকে যেকোনো অফ-রোড, এমনকি অসমতল রাস্তাতেও ভালো পারফরম্যান্স পাবেন।
বাইকটির প্রধান আকর্ষণ মূলত, এটির রিলাক্সিং রাইডিং এক্সপেরিয়েন্স এবং ক্লাসিক হেরিটেজ ডিজাইন। এটির স্পেশাল কিছু বৈশিষ্ট হলো – ৩৫০ সিসির সিঙ্গেল ওভারহেড ক্যামস্যাফট ইঞ্জিন, সিঙ্গেল/ডুয়েল চ্যানেল এবিএস, ইলেকট্রনিক ফুয়েল ইনজেকশন টেকনোলজি, শক অ্যাবজর্বার সাসপেনশন, সিঙ্গেল ডাউনটিউব স্পাইন ফ্রেম চেসিস, USB পোর্ট, ইত্যাদি। এটি কিক এবং ইলেকট্রিক উভয় মেথডে স্টার্ট করা যায়। বাইকটির লং-লাস্টিং পারফরম্যান্স এবং ডিউরেবিলিটি আপনার প্রত্যাশাকেও ছাড়িয়ে যাবে।
সুবিধা
- জে-সিরিজ প্লাটফর্ম ইঞ্জিন
- EFI অ্যাডভান্টেজ
- এন্টিলক ব্রেকিং সিস্টেম
- দুর্দান্ত অ্যাক্সিলারেশন
- USB পোর্ট এবং ইঞ্জিন কিল সুইচ আছে
অসুবিধা
- বেশ ভারী বাইক
- হ্যালোজেন লাইটিং সেটআপ
- কম ইলেকট্রিক্যাল ফিচার
(৩) ROYAL ENFIELD HUNTER 350
বাইকটি রেট্রো রোডস্টার ডিজাইনে তৈরি করা হয়েছে। বাইকের সামনে গোলাকার হেডলাইট, রোটারি সুইচ, টিয়ার-ড্রপ শেইপের ফুয়েল ট্যাংক, এটির রেট্রো লুককে যেন আরো বাড়িয়ে দেয়। তবে সব মিলিয়ে এই বাইকের ডিজাইনকে বেশ মিনিমালিস্টিক বলা যায়। বাইকের ইঞ্জিনটি ৩৫০ সিসি’র ৪-স্ট্রোক, সিঙ্গেল সিলিন্ডার এসওএইচসি ধরণের। এটির ফুয়েল সাপ্লাই সিস্টেম ফুয়েল ইঞ্জেকশন। এই ইঞ্জিন আপনাকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার পার লিটার মাইলেজ দিতে পারবে এবং সর্বোচ্চ ১১০ কিলোমিটার পার আওয়ার গতি তুলতে পারবে। দেখতে ছিমছাপ হলেও বাইকটির বিল্ড-কোয়ালিটি এবং পেইন্ট ফিনিশ আপনাকে অবশ্যই প্রিমিয়াম ফিলিং দিবে। দীর্ঘ ভ্রমণ এবং ট্যুরিং-এর জন্য এটি অসাধারণ একটি বাইক।
সুবিধা
- এবিএস ব্রেকিং
- এয়ার ও অয়েল কুলিং সিস্টেম
- ভালো সাসপেনশন
- এলিগেন্ট ডিজাইন
অসুবিধা
- জিপিএস নেই
- টুল বক্স নেই
- কম মাইলেজ
(৪) ROYAL ENFIELD METEOR 350
এটি একটি ভার্সেটাইল ইঞ্জিন এবং কম্ফোর্টেবল এরগোনোমিক্সের সমন্বয়ে এটি গর্জিয়াস একটি ক্রুইজার বাইক। ক্লাসি রেট্রো ডিজাইন, ভিনটেজ-স্টাইল, রিলাক্স রাইডিং এবং ডিসেন্ট এরগোনোমিক্স এটির প্রধান আকর্ষণ। বাইকটির মূল অংশ হলো এটির আইকনিক জে-সিরিজ প্লাটফর্ম ইঞ্জিন, যা গিয়ার ট্রানজিশন, শক্তিশালী লো-এন্ড অ্যাক্সিলারেশন এবং দুর্দান্ত থ্রোটল রেস্পন্স প্রদান করে। বাইকটি থেকে আপনি প্রায় ৩৫ কিমি/লিটার এভারেজ মাইলেজ এবং প্রায় ১২০ কিমি/আওয়ার টপ স্পিড পেতে পারেন।
বাইকটির স্পেশাল কিছু বৈশিষ্ট হলো – ৩৫০ সিসির পরিবেশ বান্ধব ইঞ্জিন, ইলেকট্রিক ফুয়েল ইনজেকশন টেকনোলজি, ডুয়েল-চ্যানেল এন্টিলক ব্রেকিং সিস্টেম, সিঙ্গেল ওভারহেড ক্যামস্যাফট, শক অ্যাবজর্বার সাসপেনশন, বিল্ট-ইন ট্রিপার নেভিগেশন, ইত্যাদি। এটি মূলত হাইওয়ে এবং লং-ডিসটেন্স রাইডিং-এর বিশেষভাবে তৈরী করা হয়েছে।
সুবিধা
- ক্লাসিক ভিনটেজ ডিজাইন, রেট্রো স্টাইলের ক্রুইজার বাইক
- আইকনিক জে-সিরিজ প্লাটফর্ম ইঞ্জিন
- ডুয়েল চ্যানেল এবিএস
- ইলেকট্রিক ফুয়েল ইনজেকশন টেকনোলজি
- বিল্ট-ইন ট্রিপার নেভিগেশন
অসুবিধা
- বেশ ভারী বাইক
- মাইলেজ আরো কিছুটা বেশি হতে পারতো
- সামনের টায়ার
(৫) ROYAL ENFIELD THUNDERBIRD 350X
এটি একটি এলিগেন্ট ডিজাইনের ক্রুইজার টাইপ বাইক। বাইকটির ক্লাসি ভিনটেজ-স্টাইল এটির জনপ্রিয়তার অন্যতম প্রধান কারণ। টুইন-স্পার্ক কার্বুরেটর ইঞ্জিন এবং ডুয়েল চ্যানেল এন্টিলক ব্রেকিং সিস্টেমের সমন্বয়ে বাইকটি বাজারে আনা হয়েছে। বাইকটি থেকে আপনি প্রায় ৩০ কিমি/লিটার এভারেজ মাইলেজ এবং প্রায় ১১০ কিমি/আওয়ার টপ স্পিড পেতে পারেন। দুর্দান্ত বিল্ড কোয়ালিটি, হাই-পারফর্মিং ইঞ্জিন এবং হাইওয়ে রোডে দীর্ঘ ভ্রমণের জন্য এটি খুবই জনপ্রিয়।
বাইকটির স্পেশাল বৈশিষ্টগুলো হলো, এটির ক্লাসিক ডিজাইন, ৩৫০ কিউবিক ক্যাপাসিটির পাওয়ারফুল ইঞ্জিন, ডুয়েল চ্যানেল এবিএস ব্রেকিং সিস্টেম, প্রজেক্টর হেডল্যাম্প, ডিআরএল লাইটিং সিস্টেম, ইত্যাদি। এটি কিক এবং ইলেকট্রিক উভয় মেথডেই স্টার্ট করা যায়।
সুবিধা
- ডুয়েল চ্যানেল এবিএস ব্রেকিং সিস্টেম
- অ্যাডজাস্টেবল সাসপেনশন সিস্টেম
- টুইন-পড রাউন্ড ইন্সট্রুমেন্ট ক্লাস্টার
- ইঞ্জিন কিল সুইচ আছে
- দীর্ঘ-ভ্রমণ এবং ট্যুরিংয়ের জন্য অসাধারণ
অসুবিধা
- বেশ ভারী বাইক
- টপ স্পিডে ভাইব্রেট করে
- রেগুলার মেইনটেনেন্স না করলে মরিচা ধরতে পারে
পরিশেষে, বাংলাদেশে কিউবিক ক্যাপাসিটি (সিসি) লিমিটেশনের কারণে রয়্যাল এনফিল্ড ব্র্যান্ডের বাইক খুব একটা পাওয়া যায় না। তবে সম্প্রতি সিসি লিমিটেশন কিছুটা শিথিল করা হয়েছে, তাই আশা করা যায় এই রয়েল ব্র্যান্ডের বেশ কিছু বাইক আমরা দেশের বাজারে দেখতে পাবো। আপডেট নিউজ হলো, ইফাদ মোটরস রয়্যাল এনফিল্ড মোটরসাইকেলের স্থানীয় প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান হিসেবে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ক্লাসিক, বুলেট, হান্টার এবং মিটিওর নামের এই চারটি মডেল স্থানীয়ভাবে তৈরি এবং বাজারজাত করবে।