ট্রেইল বাইক
বাইকপ্রেমীদের রুচি, ইচ্ছা, পছন্দ এবং চাহিদা বিবেচনা করে, মোটরসাইকেল বাজারে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত মোটরসাইকেল হলো ট্রেইল বাইক, যার মধ্যে কয়েকটি বাংলাদেশে ট্যুরিং বাইক নামেও পরিচিত। যদিও বাংলাদেশে মোটরসাইকেল ব্যবহারের পেছনের কারণ, বাংলাদেশের আকার/অবস্থান এবং রাস্তার অবস্থা ট্রেইল বাইক ব্যবহারের জন্য খুব একটা উপযুক্ত নয়, তবুও বাইকপ্রেমীরা সম্প্রতি অফ-রোড বাইকের প্রতি আগ্রহী বলে মনে হচ্ছে।
১০টি সেরা ট্রেইল বাইক
বাইকিং জগতে ট্রেইল বাইকের গুরুত্ব বিবেচনা করে বাইকারদের মধ্যে ট্রেইল বাইকের ব্যবহার-এর প্রতি আগ্রহ বেড়েই যাচ্ছে। চলুন জেনে নেই বাংলাদেশে ব্যবহৃত ও চাহিদা সম্পন্ন ১০টি সেরা ট্রেইল বাইক-এর বিস্তারিত আলোচনা।
কাওয়াসাকি কেএলএক্স ১৫০বিএফ
১৫০ সিসি সেগমেন্টের কাওয়াসাকি কেএলএক্স একটু ভিন্ন ধারার একটি বাইক। বাইকটি মূলত একটি অফ-রোড ডার্ট বাইক। বাইকটির ওভারঅল বডির ডিজাইন, পার্টস, ডাইমেনশন, কমফোর্ট ইত্যাদি বিবেচনা করলে বলা যায় বাইবাইক।কটিকে স্ট্যান্ডার্ড বাইক হিসেবেও ব্যবহার করা সম্ভব।
কাওয়াসাকি কেএলএক্স বাইকটিতে আছে ১৫০ সিসির এসওএইচসি ইঞ্জিন, যেটি ৪ স্ট্রোক বিশিষ্ট, সিঙ্গেল সিলিন্ডার, এবং এয়ার কুল্ড। বাইকটিতে আরও সংযুক্ত রয়েছে ৫-স্পিড গিয়ারবক্স এবং ওয়েট মাল্টি-প্লেট ক্লাচ। এই বাইকটি প্রধাণত ট্রেইল বাইক লাভারদের জন্য তৈরী ও বাজারজাত করা হয়।
লিফান এক্স-পেক্ট ১৫০
লিফান এক্স-পেক্ট ১৫০ ট্রেইল ও অ্যাডভেঞ্চার প্রেমীদের জন্য তৈরি করা হয়েছে। কেওক্রাডং ভ্রমণ লাভারসদের জন্য লিফান এক্স-পেক্ট ১৫০-এর চেয়ে ভালো বাইক আর কি হতে পারে! অভিজ্ঞ রাইডাররা সবসময়ই এই বাইকের প্রশংসা করে থাকেন। এই বাইকটি বেশ শক্তিশালী, যা নতুন রাইডারদেরও অভিভূত করতে পারে। যারা বেশ লম্বা তাদের জন্যও এই বাইকটি বেশ ভালো।
লিফান এক্স-পেক্ট ১৫০ সম্প্রসারিত মাডগার্ডসহ স্টক রয়েছে, যা ট্রেইলে খুব সহায়ক হবে।
লিফান এক্স-পেক্ট ১৫০ একটা ৪-স্ট্রোক, সিঙ্গেল-সিলিন্ডার এবং ১৫০ সিসি ইঞ্জিনের একটা বাইক। লিফান এক্স-পেক্ট ১৫০-এ একটি বেসিক ওয়েট মাল্টি-প্লেট ক্লাচ রয়েছে। অফ-রোডিং এর জন্য এই ট্রেইল বাইকের ব্যবহার অনেক দেখা যাচ্ছে। বাইকটিতে একটি ৫-স্পিডের গিয়ারবক্স রয়েছে। বাইকটির টপ স্পিড প্রায় ১২০ কিমি/ঘন্টা।
টিভিএস ম্যাক্স সেমি ট্রেইল ১২৫
টিভিএস তাদের সর্বকালের প্রিয় কমিউটার বাইক, টিভিএস ম্যাক্স ১২৫, একটা ১২৫ সিসি ডুয়াল-স্পোর্ট বাইক, টিভিএস ম্যাক্স সেমি ট্রেইলে পরিণত করেছে। টিভিএস ম্যাক্স সেমি ট্রেইল একটি সম্পূর্ণ এনালগ ইন্সট্রুমেন্ট ক্লাস্টারের বাইক। অফ-রোডিংয়ের সময় বিভ্রান্তি এড়াতে ইন্সট্রুমেন্ট ক্লাস্টারটিকে সহজ রাখা হয়েছে।
টিভিএস ম্যাক্স সেমি ট্রেইলে একটা ৪-স্ট্রোক, সিঙ্গেল-সিলিন্ডার এবং ১২৪.৫৩ সিসি ইঞ্জিন রয়েছে। ইঞ্জিন কার্বুরেটেড ও এয়ার-কুলড। ইঞ্জিনটি ১০.৮৬ বিএইচপি শক্তি এবং ১০.৮ এনএম টর্ক পাম্প করে। শক্তি এবং ঘূর্ণন সঁচারক বল বেশ কম বলে মনে হয়, কিন্তু জঙ্গলের মধ্য দিয়ে যাওয়ার জন্য এগুলি যথেষ্ট। টিভিএস ম্যাক্স সেমি ট্রেইলে একটি বেসিক ওয়েট মাল্টি-প্লেট ক্লাচ রয়েছে। বাইকটিতে একটি ৫-স্পিড গিয়ারবক্স রয়েছে। বাইকের টপ স্পিড প্রায় ১১০ কিমি/ঘন্টা।
কাওয়াসাকি ডি-ট্র্যাকার ১৫০
কাওয়াসাকি ডি-ট্র্যাকার হল কাওয়াসাকির একটি ১৫০ সিসি স্মার্ট এবং স্টাইলিশ সুপারমোটো-স্টাইলের বাইক। কাওয়াসাকির মতে, ডি-ট্র্যাকারের সমস্ত বাইকের ফিচারস রাইডারদের অন-রোড এবং অফ-রোড পারফরম্যান্সের মিশ্রণের জন্য ডিজাইন করা হয়েছিল। রাইডারকে অফ-রোড ট্রেইলে এবং সেইসাথে সাধারণ রাস্তায় দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে সাহায্য করার জন্য রয়েছে উঁচু সিট, গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স, লম্বা সাসপেনশন এবং উঁচু-উত্থাপিত হ্যান্ডেলবার।
কাওয়াসাকি ডি-ট্র্যাকার-এ একটি SOHC সিঙ্গেল সিলিন্ডার, ৪-স্ট্রোক, ১৪৪ সিসির এয়ার-কুলড ইঞ্জিন আছে। এই মেশিনের পাওয়ার এবং টর্কের পরিমান নিম্নরূপ: ১২ পিএস @ ৮০০০ আরপিএম এবং ১১.৩ এনএম @ ৬৫০০ আরপিএম। এই বাইকটির পেছনের দিকে বড় স্প্রোকেট সহ একটি ৫-স্পিড কনস্ট্যান্ট মেশ রিটার্ন শিফট ম্যানুয়াল ট্রান্সমিশন রয়েছে।
এপ্রিলিয়া টেরা ১৫০
এপ্রিলিয়া টেরা ১৫০, উন্নত মাডগার্ড এবং একটি বিল্ট-ইন লাগেজ রেলের মতো অনন্য বৈশিষ্ট্যগুলি অফার করে। যদিও এই বৈশিষ্ট্যগুলি অন-রোড রাইডারদের কাছে খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ মনে নাও হতে পারে, তবে এগুলি অ্যাডভেঞ্চার উত্সাহীদের জন্য অপরিহার্য ও অনন্য। বাইকটির প্রশস্ত ও প্রসারিত আসন আরোহী এবং পিলিয়ন উভয়কেই একটি আরামদায়ক অভিজ্ঞতা প্রদান করে।
এপ্রিলিয়া টেরা ১৫০ বাইকটির সামনের এবং পিছনের চাকায় যথাক্রমে ১০০/৯০ এবং ১৩০/৮০ সাইজের টায়ার রয়েছে। প্রদত্ত টায়ারগুলো সেমি-অফ-রোড ট্রেডস, যার মানে বাইকটি অন-রোড এবং অফ-রোড উভয় ক্ষেত্রেই ভা্লো পারফর্ম করবে।
লিফান কেপিটি ১৫০
লিফানের এই বাইকটিকে সরাসরি স্পোর্টস বাইক হিসেবে বিবেচনা করা না হলেও বলা যেতে পারে এটি একটি অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস। লিফান কেপিটি ১৫০-এর ডিজাইন সম্পূর্ণ নতুন যা একটি অ্যাডভেঞ্চার বাইকের মতোই। এটিতে এগ্রেসিভ জ্বালা্নি ট্যাঙ্ক সহ একটি রিসেন্ট মডেলের হেডল্যাম্প রয়েছে। বাংলাদেশে এই ট্রেইল বাইকের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে।
এটিতে ১৫০ সিসি ফোর-স্ট্রোক লিকুইড কুলড সিঙ্গেল সিলিন্ডার রয়েছে, যা ১৪.৮ বিএইচপি @ ৮৫০০ আরপিএম সর্বোচ্চ শক্তি উৎপাদন করতে পারে এবং সর্বোচ্চ টর্ক হল ১৪ এনএম @ ৬৫০০ আরপিএম। এছাড়াও, ইঞ্জিনটিতে একটি ৬-স্পিড গিয়ারবক্স রয়েছে এবং প্রতি ঘন্টায় সর্বোচ্চ ১২০ কিলোমিটারের বেশি স্পিড দেয়।
হোন্ডা সিআরএফ১৫০এল
হোন্ডা সিআরএফ১৫০এল মূলত একটি হালকা ওজনের ট্রেইল বাইক বাইক, যা চমৎকার ডিজাইন এবং চমৎকার গ্রাফিক্সের সমন্বয়ে একটি নিখুঁত ডিজাইন করা হয়েছে।
হোন্ডা সিআরএফ১৫০এল বাইকটিতে সম্পূর্ণ ডিজিটাল মিটার প্যানেল ব্যবহার করা হয়েছে, যার স্পিডোমিটার, ওডোমিটার এবং ট্রিপমিটার সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজড। বাইকটির মাইলেজ প্রায় ৪৫.৫ কিমি/লিটার, যা একটি অফ-রোড মোটরসাইকেলের জন্য বেশ ভালো।
বাংলাদেশে এই ট্রেইল বাইকের ব্যবহার খুব বেশি দেখা যায় না, তবে এই বাইকের চাহিদা অনেক বেশি। এতে ব্যবহৃত হালকা ওজনের কালো অ্যালুমিনিয়াম রিম অফ-রোড রাইডিংয়ের জন্য খুবই সহায়ক।
হিরো এক্সপালস ২০০
হিরো এক্সপালস ২০০ বাইকটি তুলনামূলক হালকা ওজনের মাল্টিপারপাস বাইক। এটি ভারতীয় ব্র্যান্ড হিরো-এর তৈরি একটি হাই সিসি অন ও অফ রোড বাইক। হিরো কোম্পানি এই বাইকটিকে অন ও অফ উভয় রোডের জন্যই উপযোগী করে বানিয়েছে। এতে করে একদিকে যেমন উভয় দিকেই কিছু না কিছু বৈশিষ্টের অভাব থাকছে, কিন্তু আবার অপরদিকে এই বাইকটির ক্রেতারা পাচ্ছেন একটি ডাবল প্যাকেজ।
হিরো এক্সপালস ২০০ বাইকটিতে ব্যবহৃত হয়েছে ডুয়াল পারপাস টায়ার, অর্থাৎ এটি অন রোড এবং অফ রোড উভয় ক্ষেত্রেই মানানসই। একটি অফ রোড বাইক হিসাবে এই বাইকটিতে দেওয়া হয়েছে ২২০ মিমি হাই গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স, যা অফ রোড রাইডিং-এ রাইডারকে আরো আত্মবিশ্বাস করবে। এই বাইকটিতে ফ্রন্ট – ৫৩৩.৪ মিমি এবং রিয়ার – ৪৫৭.২ মিমি হুইল ব্যবহার করা হয়েছে. যেটি স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা বড়, ফলে অফ রোড রাইডিং হবে আরো সহজ।
কাওয়াসাকি কেএলএক্স ১৫০এল
কাওয়াসাকি কেএলএক্স ১৫০এল যা কেএলএক্স ১৫০ বিএফ এবং ডি-ট্র্যাকারের মতোই, তবে এগুলার চেয়ে একটু ভালো। বাংলাদেশের পেক্ষাপটে কেএলএক্স ১৫০এল মডেলটি অনেক কার্যকর। অফ রোড বাইক হিসাবে এই মডেল বাংলাদেশ সহ বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। প্রতিদিনের শহর যাত্রা বা অফ-রোড ট্রেলের জন্য উপযুক্ত একটি বাইক।
বাইকটিতে ১৪৪ সিসি ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে যা এয়ার কুলড, ৪-স্ট্রোক, সিঙ্গল সিলিন্ডার এবং এসওএইচসি, সর্বোচ্চ শক্তি ১০.৩০ এইচপি @ ৮০০০ আরপিএম এবং সর্বাধিক টর্ক ১০ এনএম @ ৬৪০০ আরপিএম উৎপন্ন করতে সক্ষম। বাইকটিতে আছে ৫-স্পিড ম্যানুয়াল গিয়ার। বাইকটির মাইলেজ প্রতি লিটারে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার ও এর সর্বোচ্চ গতি প্রতি ঘন্টায় প্রায় ১৩০ কিলোমিটার।
হোন্ডা সিআরএফ ২৫০এফ
হোন্ডা সিআরএফ২৫০ফ একটি দুর্দান্ত ট্রেইল বাইক যা বিস্তৃত ক্যাজুয়াল রাইডারদের সাথে বেশ মানানসই৷ এর ফুয়েল-ইনজেক্টেড ইঞ্জিন একটি প্রশস্ত পাওয়ারব্যান্ড জুড়ে নির্ভরযোগ্য শক্তি প্রদান করে, এমনকি ঠান্ডা আবহাওয়া এবং উচ্চ উচ্চতায়ও। মজবুত স্টিলের ফ্রেম বাম্প বন্ধ করে দেয় যা অফ-রোড রাইডিংয়ের একটি অংশ।
হোন্ডা সিআরএফ২৫০ফ-এ ২৪৯ সিসি, ৪-স্ট্রোক ইঞ্জিন আছে। এর সু-ভারসাম্যপূর্ণ সাসপেনশন এটিকে নতুন বা অভিজ্ঞ রাইডারদের জন্য ট্রেইল রাইডিং খুবই মজাদার করে তোলে। এর কমপ্যাক্ট ডাইমেনশন এবং অসাধারণ হ্যান্ডলিং ট্রেইলে যাওয়ার সময় আত্মবিশ্বাস এবং নিয়ন্ত্রণকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
পরিশেষে, অফ রোডের ক্ষেত্রে ট্রেইল বাইকের গুরুত্ব অপরিসীম। অফ রোডের জন্য সেরা ট্রেইল বাইকগুলোর আলোচনা থেকে আপনারা ধারণা নিতে পারবেন কোন ট্রেইল বাইকটি কেমন পারফরম্যান্স দিতে পারবে। এতে খুব সহজেই আপনি কোনো দ্বিধা ছাড়াই আপনার জন্য সঠিক ট্রেইল বাইকটি পছন্দ করতে পারবেন।
জানার জন্য আরও পড়ুন – মাউন্টেন বাইকিং ট্রেইল এর জন্য সেরা রুটগুলি আবিষ্কার করুন।