Royal Enfield Bullet Trials 350 রিভিউ, দাম, ফিচার এবং স্পেসিফিকেশন

Royal Enfield Bullet Trials 350 হলো একটি ক্লাসিক ডিজাইনের ক্রুইজার টাইপ মোটরসাইকেল। বাইকটি থেকে যেকোনো অফ-রোড, অসমতল-পাহাড়ি রাস্তায় দুর্দান্ত পারফরম্যান্স পাবেন। ১৯৩২ সালে বাইকটির প্রথম সংস্করণ বাজারে আনা হয়েছিল, এরপর থেকে পর্যায়ক্রমে বাইকটিতে বিভিন্ন আধুনিক ফিচার, যেমন, ইলেকট্রিক স্টার্ট, অ্যাডজাস্টেবল সাসপেনশন, ডিস্ক ব্রেক, এবিএস ইত্যাদি সংযুক্ত করা হয়েছে। তবে বাইকটির ক্লাসিক ডিজাইনে উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। Royal Enfield Bullet Trials 350 রিভিউ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। মূলত দুর্গম এলাকায় ট্র্যাকিং, অফ-রোড চলাচল কিংবা পাহাড়ি রাস্তায় চলাচলের জন্য বাইকটি বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়।

পৃথিবীতে প্রচুর বিভিন্ন মডেলের মোটরবাইক উৎপাদন হয়েছে এবং হচ্ছে, তবে খুব অল্প কিছু বাইক প্রজন্মের পর প্রজন্ম রাজত্ব করতে পারে। রয়েল এনফিল্ড বুলেট ট্রায়ালস ৩৫০, এরকম একটি আইকনিক বাইক। ব্যাটলফিল্ড থেকে পাহাড়ি টেরাইন সকল ক্ষেত্রে বাইকটির সক্ষমতা প্রমাণিত। এটি শুধু মাত্র একটি মেশিন নয়, নয় দশকেরও বেশি সময় ধরে একটি গ্রাহকের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে। এটি আপনি নিজের মতো করে কাস্টোমাইজ করতে পারবেন।

Royal Enfield Bullet Trials 350 রিভিউ

বাইকটির ইঞ্জিন পারফরম্যান্স এবং ডিউরেবিলিটি আপনার প্রত্যাশাকেও ছাড়িয়ে যাবে। এটি আপনাকে বছরের পর বছর দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেবে। এটির বর্তমান সংস্করণটিতে দীর্ঘ-স্ট্রোক সহ জে-সিরিজ প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করা হয়েছে। ইঞ্জিনটি ৩৫০ সিসির SOHC সংযুক্ত ফুয়েল ইনজেক্টেড। আগের সংস্করণগুলো কার্বুরেটেড ইঞ্জিন। বাইকটি থেকে আপনি প্রায় ৩০ কিমি/লিটার এভারেজ মাইলেজ এবং প্রায় ১৩০ কিমি/আওয়ার টপ স্পিড পেতে পারেন। ইঞ্জিনের সিগনেচার বুলেট বিট সাউন্ড সহ লো-এন্ড-টর্ক যে কাউকে আকর্ষণ করবে।

বাইকটির স্পেশাল কিছু বৈশিষ্ট হলো – ৩৫০ সিসির সিঙ্গেল ওভারহেড ক্যামস্যাফট ইঞ্জিন, ডুয়েল চ্যানেল এবিএস, ফুয়েল ইনজেকশন সিস্টেম, শক অ্যাবজর্বার সাসপেনশন, সিঙ্গেল ডাউনটিউব চেসিস, ইত্যাদি। এটি যেকোন অফ-রোড এবং ট্রায়াল রেসিং-এর উপযোগী করে তৈরী করা হয়েছে। এটির বাউন্সি গ্রিপ-টায়ার এবং রাফ-রোডে চলাচলের উপযোগী শক্তিশালী সাসপেনশন যেকোনো ধাক্কা অ্যাবজর্ব করতে পারে। বাইকটির লাইটিং এবং ইলেকট্রিক্যাল সিস্টেম খুবই কার্যকর। এটি কিক এবং ইলেকট্রিক উভয় মেথডে স্টার্ট করা যায়।

ফিচার এবং ডিজাইন

এটি একটি হাই-পারফর্মিং রেট্রো লুকিং ক্রুইজার টাইপ বাইক। এটি দেখতে খুব একটা গর্জিয়াস না হলেও, এটির ভিনটেজ এরগোনোমিক্স স্টাইল আপনাকে মুগ্ধ করবে। বাইকটির প্রধান আকর্ষণ মূলত, প্রতিকূল রাস্তায় চলাচলের উপযোগীতা। এটির স্পিড এবং অ্যাক্সিলারেশন টপ-ক্লাস। ক্লাসিক ডিজাইনের ইন্সট্রুমেন্ট ক্লাস্টার, হেডলাইট গ্রিল, এবং হ্যান্ডেলবার ব্রেস প্যাড বাইকটিকে একটি ক্লাসি লুক এনে দিয়েছে। এছাড়াও এটির ইঞ্জিন গার্ড, নম্বর বোর্ড, অ্যালুমিনিয়াম সাম্প গার্ড এবং সিঙ্গেল ডাউন টিউব চেসিস আপনাকে মুগ্ধ করবে।

বাইকটির সিঙ্গেল সিটটি কিছুটা লম্বাটে এবং উরুর নীচের সাপোর্ট উন্নত করা হয়েছে, যা অফ-রোডে এবং দীর্ঘ ভ্রমণে বেশ ভালো কমফোর্ট দিতে পারে। বাইকটির লাল রঙের চ্যাসিস, ফুয়েল ট্যাংকে ব্র্যান্ড লোগো ডিজাইন, আপ-সুইপ্ট এক্সজস্ট, শর্ট ফ্রন্ট এবং রিয়ার-ফেন্ডার সহ ডুয়েল-পারপাস টায়ার এটিকে একটি অ্যাগ্রেসিভ লুক এনে দিয়েছে। এছাড়াও ইঞ্জিন গার্ড, নম্বর বোর্ড, পিছনের লাগেজ র‍্যাক, ব্যাশ প্লেট এবং সাইড প্লেট ডিজাইন এটির আকর্ষণ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। দীর্ঘ ভ্রমণ বা ট্রায়ালের জন্য এটি নিখুঁত একটি বাইক।

ইঞ্জিন পারফরম্যান্স

বাইকটিতে ৩৪৬.০ সিসি ডিসপ্লেসমেন্ট ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে। এই ইঞ্জিন ৪-স্ট্রোক, এয়ার-কুল্ড, এবং সিঙ্গেল-সিলিন্ডার ফিচার বিশিষ্ট। এছাড়াও ইঞ্জিনটি টুইন-স্পার্ক এবং কার্বুরেটেড সংযোজিত। তবে বাইকটির নতুন সংস্করণটিতে ফুয়েল ইনজেকশন সেটআপ দেয়া হয়েছে। এটি ৫২৫০ আরপিএমে ১৯.৭৩ বিএইচপি সর্বোচ্চ পাওয়ার এবং ৪০০০ আরপিএমে ২৮ এনএম সর্বোচ্চ টর্ক উৎপন্ন করতে পারে। ইঞ্জিনের লো-এন্ড-টর্ক স্মুথ অ্যাক্সিলারেশন নিশ্চিত করে। ইঞ্জিনের পাওয়ার ডেলিভারি যথেষ্ট ভালো, তাই ভারী বাইক হলেও যেকোনো পরিস্থিতিতে আপনি বাইকটি স্ট্যাবল রাখতে পারবেন। বাইকটির ট্রান্সমিশন সিস্টেম ম্যানুয়াল, এখানে ওয়েট মাল্টিপ্লেট ক্লাচ সিস্টেম সহ ৫-স্পিড গিয়ারবক্স ইনস্টল করা হয়েছে।

বডি ডাইমেনশন

রয়েল এনফিল্ড বুলেট ট্রায়ালস ৩৫০ বাইকটির ওভারঅল দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং উচ্চতা যথাক্রমে ২০৮০ মিমি, ৮০৫ মিমি, এবং ১১২৩ মিমি। বাইকটির ফুয়েল ট্যাংক মোটামুটি বড়, ফুয়েল ক্যাপাসিটি ১৩.৫ লিটার। এটির বেশ ভারী একটি বাইক, ওজন ১৮৭ কেজি। বডি স্ট্রাকচার অনুযায়ী ওজন পারফেক্ট হওয়ায়, টপ স্পিডে এবং যেকোনো সিচুয়েশনে বাইকটি কন্ট্রোল করা সহজ। এটির হুইলবেস বেশ বড়, ১৩৯০ মিমি, যা কর্ণারিং-এ সহায়ক। সিটিং পজিশনের উচ্চতা ৮০০ মিমি। এটির গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স বেশ কম, মাত্র ১৩৫ মিমি, তাই বেশি উঁচু স্পিড ব্রেকার অতিক্রম করার সময় সতর্ক থাকতে হবে।

বাইকটিতে পিলিয়ন সিট দেয়া হয়নি, এখানে পিছনের লাগেজ র‍্যাক প্রতিস্থাপন করেছে। তবে আপনি পিলিয়ন সিটটি আলাদা করে কাস্টমাইজ করতে পারবেন। এটির বডি স্ট্রাকচার খুবই মজবুত, তাই যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বাইকটি বেশ ভালো সাপোর্ট দিতে পারে। ডালপালা কিংবা নুড়ি-পাথর থেকে রক্ষা পাবার জন্য হেডলাইটের উপরে গ্রিল দেয়া হয়েছে। ময়লা বা কাদা থেকে বাঁচার জন্য বেশ বড় মার্ডগার্ড ব্যবহার করা হয়েছে।

ব্রেকিং এবং সাসপেনশন সিস্টেম

হাই-পারফর্মিং সাসপেনশন এবং উন্নত ব্রেকিং সিস্টেম বাইকটির অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। সাসপেনশন সিস্টেমে বাইকটির সামনের দিকে অ্যাডজাস্টেবল টেলিস্কোপিক ফর্ক এবং পিছনের দিকে ৫-স্টেপ অ্যাডজাস্টেবল প্রি-লোড টুইন গ্যাস চার্জড শক-অ্যাবজর্বার সাসপেনশন ব্যবহার করা হয়েছে। এই সাসপেনশন সিস্টেম খুবই স্মুথ পারফরম্যান্স দিয়ে থাকে। এটি যেকোনো ধাক্কা স্মুথলি অ্যাবজর্ব করতে পারে এবং ইঞ্জিনের ফ্রিকশন কমাতে সাহায্য করে।

বাইকটিতে ডুয়েল চ্যানেল এবিএস ব্রেকিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয়েছে। সামনের চাকায় ২৮০ মিমি-এর ডাবল পিস্টন ক্যালিপারের ডিস্ক ব্রেক এবং পিছনের চাকায় ২৪০ মিমি-এর ফ্লোটিং সিঙ্গেল পিস্টন ক্যালিপারের ডিস্ক ব্রেক ব্যবহার করা হয়েছে। এই ব্রেকিং সিস্টেম খুবই নিরাপদ এবং যেকোনো রাস্তায় দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দিতে পারে।

হুইল এবং টায়ার

বাইকটিতে স্পোকি টাইপ হুইল এবং গ্রিপি মোটা টায়ার ব্যবহার করা হয়েছে। বাইকটির হুইলবেস বেশ বড় এবং টায়ার যথেষ্ট শক্তিশালী। এটির সামনের চাকায় ৯০/৯০-১৯, ৫২পি সেকশন টায়ার, এবং পিছনের চাকায় ১১০/৮০-১৮, ৬২পি সেকশন টায়ার ব্যবহার করা হয়েছে। সামনের হুইলের রিম সাইজ ১৯” ইঞ্চি এবং পিছনের হুইলের রিম সাইজ ১৮” ইঞ্চি। এই টায়ারের গ্রিপ যথেষ্ট শক্তিশালী। হুইল এবং টায়ারের পারফেক্ট মেজারমেন্টের কারণে বাইকটি টপ স্পিডে এবং কর্ণারিং-এ যথেষ্ট স্ট্যাবল থাকে।

মাইলেজ এবং স্পিড

বাইকটি মূলত অফ-রোড অর্থাৎ রুক্ষ রাস্তায় রাইডিং এবং ক্লাসিক ভিনটেজ স্টাইলের জন্য জনপ্রিয়। মাইলেজ ক্রুইজার টাইপ বাইকের প্রধান আকর্ষণ নয়। তবে এই বাইকটি থেকে আপনি স্ট্যান্ডার্ড মাইলেজ এবং দুর্দান্ত স্পিড পাবেন। বাইকটি থেকে আপনি প্রায় ৩০ কিমি/লিটার এভারেজ মাইলেজ এবং প্রায় ১৩০ কিমি/আওয়ার টপ স্পিড পেতে পারেন।

কনসোল প্যানেল এবং ইলেকট্রিক্যাল ফিচার

বাইকটিতে ট্রায়াল রেসিং-এর উপযোগী সকল ফিচার কনসোল প্যানেলে দেখতে পাবেন। এটির কনসোল প্যানেল সাধারণ এনালগ ধরণের। কনসোল প্যানেলে স্পিডোমিটার, এবং ওডোমিটার রয়েছে। বাইকটির নতুন সংস্করণে USB পোর্ট ফিচার সংযুক্ত করা হয়েছে। তবে ট্যাকোমিটার এবং ফুয়েল গেজ না থাকাটা হতাশাজনক।

বাইকটিতে ১২ ভোল্টের শক্তিশালী এমএফ টাইপ ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে। এই ব্যাটারি সকল ইলেকট্রিক্যাল ফিচার মেইনটেইন করতে পারে। বাইকটির সকল লাইটিং সিস্টেম হ্যালোজেন টাইপ হলেও খুবই পাওয়ারফুল। ওভারঅল Royal Enfield Bullet Trials 350 রিভিউ অনুযায়ী কনসোল প্যানেল এবং ইলেকট্রিক্যাল ফিচার যথেষ্ট কার্যকর।